বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাড়ছে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা

আজ বিশ্ব সমুদ্র দিবস

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ দেশই ল্যান্ডলক্‌ড বা স্থলসীমাবেষ্ঠিত ভূ-খন্ড, যাদের নেই কোন সমুদ্রসীমা। কিন্তু বাংলাদেশ সাগরবেষ্ঠিত দেশ, যার রয়েছে স্থলভাগের প্রায় সমান সমুদ্রখন্ড। আর এ সমুদ্রকে ঘিরে ইতোমধ্যে সুনীল অর্থনীতি নামে নতুন এক অর্থনৈতিক বিপ্লবের স্বপ্নের সূচনা হয়েছে দেশে। এরই অংশ হিসাবে আজ ৮ জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবসে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, সেইফ, নৌ-পরিবহণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিচার্স ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে কঙবাজারে আয়োজন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বে অফ বেঙ্গল ফেস্টিভাল-২০২২ এর।

পৃথিবীর মোট ৬৪টি লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেম বা সমুদ্রের মধ্যে অন্যতম আমাদের বঙ্গোপসাগরও। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম রিভার সিস্টেম গঙ্গা-ব্রক্ষ্মপুত্র-মেঘনা বা পদ্মা-যমুনা-মেঘনা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণ স্বাদু পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উপকূল ও সাগরের পানি পৃথিবীর অন্যতম উর্বর জলরাশি হিসাবে স্বীকৃত, যেখানে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রসহ বিশ্বে বিপন্নপ্রায় বিরল কয়েকটি সামুদ্রিক জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল (হটস্পট)।

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিজস্ব জলসীমার আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। সম্প্রতি দেশের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ২২০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল ও ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করেন। আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মহাসাগরীয় জায়ান্ট হিসাবে পরিচিত বিশ্বের বিরল প্রজাতির তিমি ও ডলফিন। Wildlife Conservation Society (WCS) এর সর্বশেষ জরীপ মতে বাংলাদেশে ১৩ প্রজাতির সিটাসিয়ান বা জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে; যার মধ্যে ৫ প্রজাতির তিমি, ৭ প্রজাতির শুশুক (ডলফিন) ও এক প্রজাতির হুছুম (পরপইস)।

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্লাস্টিকসহ নানা দূষণের কারণে আগামী ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাগর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে ওঠতে পারে বলে আশংকা বিজ্ঞানীদের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুল আলম বলেন, সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে দূষণের মাত্রা বেড়েছে, যে কারণে সাগরের মৎস্যসম্পদ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সাগরের পানিতে মাইক্রোবায়াল পলিউশন বা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূষণ বেড়ে যাওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। যে কারণে কঙবাজারের পর্যটন শিল্পও হুমকীর মুখে পড়তে পারে।

নেকমের ব্যবস্থাপক সমুদ্র বিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ুম বলেন, পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে উপকূলে কাঙ্খিত হারে কাছিম ডিম পাড়তে আসছে না। এমনকি এক দশক আগের তুলনায় এটা মাত্র ১০ ভাগে নেমে এসেছে। এছাড়া বিশ্বের বিরল প্রজাতির হঙবিল টার্টল এখন কঙবাজারে খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও মৎস্য অনুষদের ডিন ড. বাশেদউন্নবী রাফি মনে করেন, আমাদের বঙ্গোপসাগর দেশের এক বিশাল সম্ভাবনাময় সম্পদ। এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সমুদ্র দূষণ বন্ধে পর্যটন এলাকায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধেরও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, জনগণের মাঝে সমুদ্র সংক্রান্ত জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে একটি সমুদ্রসাক্ষর জাতি গঠনের মাধ্যমে আমরা সমুদ্রকে রক্ষা করতে পারি। এই জন্য পাঠ্যপুস্তকে সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয় অন্তভূক্ত করতে হবে। বর্তমানে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোন পাঠ্য পুস্তকে সমুদ্র সংক্রান্ত কোন বিষয় পড়ানো হয় না। অনেকে সাগর দূষণ কথাটাও মানতে নারাজ। অথচ আমাদের অজ্ঞতার কারণে সৃষ্টিকর্তার এমন অমূল্য দানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৬ ব্যক্তিকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধশেয়ার সোয়েটারের মালিক দম্পতির কারাদণ্ড