বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি

| সোমবার , ১৫ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, রাজনৈতিক কবি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফুর রহমান, তার মা সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার নানা শেখ আবদুল মজিদ তার নামকরণ করেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। তার ডাকনাম ছিল ‘খোকা’। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে আই.এ. এবং ১৯৪৭ সালে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হন। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটেছিল ১৯৩৯ সালের মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ছয় দফা স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়। তবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু সরকার গঠনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা চালায়।

ফলশ্রুতিতে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খানের সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলেও তা কার্যকর করা হয়নি। নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। এগুলোর উপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং তদানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে তিনি একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। তিনি জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কার (১৯৭৩), গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০২০) লাভ করেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের মাটিতেই বঙ্গবন্ধু অনেক স্বপ্ন বুনেছিলেন
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু হত্যা, একটি স্বপ্নের অকাশ মৃত্যু