বই নিয়ে অন্যরকম আয়োজন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

রাস্তার দুই পাশে ফুটপাতে সারি সারি সাজানো বইয়ের স্টলে উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড়ে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো কিশোর-কিশোরীর দল যেমন উপস্থিত, তেমনি ছিলেন প্রবীণ পাঠকও। বাবার সাথে দেখা গেছে ছোট্ট সোনামণিদের। এমন দৃশ্য দেখে কোনো আগন্তুক থমকে দাঁড়াতেই পারেন, কারণ বই নিয়ে এমন আয়োজনটাই যে অভাবনীয়! অবশ্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন নয়। কেননা তৃতীয়বারের মতো ‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ এই স্লোগানে গতকাল ৯ ডিসেম্বর দিনব্যাপী নগরীর জামালখানে আয়োজিত হয় শীতকালীন বই বিনিময় উৎসব। সকাল সাড়ে নয়টায় আয়োজনের শুরুটা হয় সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
প্রতীকী বই বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব এবং শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান। এ সময় তিনি পরিশুদ্ধ বাংলাদেশি হিসেবে গড়ে উঠার জন্য নিজের মনন বিকাশের উপর গুরুত্ব দিতে সকলকে আহবান জানান। বই বিনিময় উৎসবের এমন ধারণাকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন সকলকে। উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপসচিব ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। অংকন দে অনিমেষের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উৎসবের সমন্বয়ক সাইদ খান সাগর। এছাড়াও বই বিনিময় উৎসবে দিনব্যাপী সমাগম ঘটে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের। সকালে উপহারস্বরূপ বই নিয়ে হাজির হন কবি ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। বিকালে আসেন খ্যাতিমান অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান। তাকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে সকল স্তরের মানুষ। অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান বলেন, বই বিনিময় উৎসবের এত চমকপ্রদ চিন্তা এই তরুণদের কাছ থেকে এসেছে এটাই আমার কাছে আনন্দের। এত নিঃস্বার্থ এবং নিরলসভাবে ছেলেগুলো জ্ঞান বিনিময়ের
সুযোগ করে দিচ্ছে সকলকে- এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। পড়া কোনো বইয়ের বিনিময়ে না পড়া কোনো বই সংগ্রহ করা- এটিই বই বিনিময় উৎসবের মূল প্রতিবাদ্য। কেন এই ধরনের আয়োজন? জানতে চাইলে উৎসবের সমন্বয়ক এবং আয়োজক সংগঠন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক সাইদ খান সাগর জানান, “বই বিনিময়ের ধারণা নতুন কিছু নয়। স্কুলজীবনে বন্ধুদের সাথে আমরা তিন গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো যেভাবে বিনিময় করতাম, এই আয়োজন তারই এক আনুষ্ঠানিক সংস্করণ। শীতকালীন বই বিনিময়ের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশব। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে এ সময়ে আমরা পাড়ায় এর ওর থেকে বই নিয়ে পড়তে শুরু করতাম। আমাদের এই আয়োজন তারই এক নতুন সংস্করণ। প্রযুক্তির এই যুগেও আমরা জ্ঞানের এই বিনিময় ধরে রাখতে চাই।”
প্রসঙ্গত চলতি বছরের শুরুতে মার্চ মাসে দ্বিতীয়বারের মতো একই ধরনের আয়োজন করেছিল ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ। এবারের আয়োজনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন একশজন স্বেচ্ছাসেবক। সুশৃঙ্খল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ পাঠক সমাজের চোখেমুখে ছিল আয়োজকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। উৎসবে বই বিনিময় করতে আসা কলেজ পড়ুয়া আফরোজা সুলতানা জানান, প্রতিবার বই বিনিময় উৎসবে বই বিনিময় করে নিয়ে যেতে পারেন বিনামূল্যে। এর ফলে তার অনেকসময় দুষ্প্রাপ্য বইগুলোও পড়ার সুযোগ হয়ে যাচ্ছে।
মাত্র ৮৬টি বই নিয়ে ২০২০ সালে যারা বই বিনিময় এর কাজ শুরু করেছিলেন, এখন তাদের আছে হাজার হাজার বই। নিয়ম অনুযায়ী যে কেউ পাঁচটি বই জমা দিয়ে নিতে পারবে পছন্দের অপর ৫টি বই। তবে বেঁধে দেওয়া আছে নিয়ম। যে ক্যাটাগরির বই দেবে; ঠিক সেই ক্যাটাগরিরই বই নিতে পারবে। তবে ছাড় দেওয়া আছে একাডেমি সম্পর্কিত বইয়ের ক্ষেত্রে। নেই কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা। দিতে ও নিতে পারবে অসংখ্য বই। আয়োজকদের কাছ থেকে জানা যায় চৌদ্দ হাজার বই বিনিময় হয়েছে এবার। সর্বোচ্চ সংখ্যক বই বিনিময় হয়েছে একাডেমিক ক্যাটাগরি এবং কথাসাহিত্য ক্যাটাগরিতে। আয়োজনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমিরাতে এক বাসায় চন্দনাইশের একজনসহ ৩ প্রবাসীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধটংকাবতী খালে ডুবে যুবকের মৃত্যু