ফেরার পথে তুষার ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম

এভারেস্টের চূড়ায় বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেছিলাম অক্সিজেন ছাড়াই । আজাদীর সাথে আলাপকালে বাবর আলী

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৩ মে, ২০২৪ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

একই অভিযানে পৃথিবীর ৮ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার দুইটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে তুষার ঝড়ে পড়লেও এখন একেবারে ‘পারফেক্ট’ রয়েছেন বাবর আলী। অবস্থান করছেন পাহাড়ের ৫ হাজার ৩৬০ মিটার উচ্চতার বেসক্যাম্পে। যেখান থেকে তিনি শুরু করেছিলেন এভারেস্ট অভিযান। এখানে এক দুইদিন রেস্ট নিয়ে আবারো শুরু হবে তার পায়ে হেঁটে নিচের দিকে যাত্রা। পাহাড়ের ২ হাজার ৬শ’ মিটার উচ্চতার লুকলা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে তাকে তিন দিন হাঁটতে হবে। ওই বিমানবন্দর থেকেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি তার এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, আমার ফেরার টিকেট জুনের ৩ তারিখের। তবে আমি দুই চারদিন আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করছি। দেশের জন্য প্রাণটি হু হু করছে বলে উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের আলো হাওয়ায় বেড়ে উঠার কথা উল্লেখ করে তিনি এখানকার মানুষের জন্য তার ভালোবাসার কথাও জানান। হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে ‘চাটগাঁইয়া পোলা’ ডা. বাবর আলী কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো আছি, সুস্থ আছি। একদম পারফেক্ট। তবে দেশের জন্য প্রাণটি হু হু করছে। কতক্ষণে দেশে যাবো, পরিবারের কাছে যাবো তার বেশ আকুতি টের পাচ্ছি।

গতরাত ৯টা নাগাদ টেলিফোনে বাবর আলী বলেন, আজ বিকেল ৪টা নাগাদ ব্যাসক্যাম্পে পৌঁছেছি। এটাও পাহাড়ের উপর। ৫ হাজার ৩৬০ মিটার উঁচু। এখান থেকেই মূলতঃ এভারেস্ট অভিযান শুরু করা হয়। আমি এখানে এসে রেস্ট নিলাম। বাবা মা ও ভাই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম। কিছু বন্ধুবান্ধবও ফোন করেছেন। তাদের সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। বেস ক্যাম্পে আরো দুইদিন রেস্ট নেবেন বলেও জানালেন তিনি। তিনি বলেন, শরীর স্বাস্থ্যে একদম ঠিক আছি। তবুও আরো দুইদিন রেস্ট নিয়ে আরো একটু ফিট হবো। সামনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যদি পাহাড় থেকে নামবো, তবুও তিন দিন হেঁটেই আমাকে লুকলা বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে।

এভারেস্ট জয় করে কেমন লাগছে জানতে চাইলে ডা. বাবর আলী বলেন, আসলে এই অনুভূতি অন্যরকম। আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল এভারেস্টের চূড়া থেকে পৃথিবী দেখা। সেটি দেখেছি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে তুষার ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডবে পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশ ঝড়ে পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা পথ চলতে পারছিলাম না। তাই এভারেস্টের চূড়া থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট নিচের ব্যাস ক্যাম্প৪ এ পৌঁছাতে আমাদের বেশ দেরি হয়ে যায়। তুষার ঝড়ের কবলে না পড়লে আরো অন্তত দুই ঘণ্টা আগে বেস ক্যাম্পে পৌঁছাতে পারতাম। ঝড়ে কষ্ট হলেও ভয় পাননি ডেথ জোন পার হওয়ার সময় ভয় পেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি হেসে জবাব দেন, পুরো সামিটই তো ভয়ের। এই ভয়কে জয় করেই তো এভারেস্ট জয় করতে হয়।

পাহাড়ের ১৭ হাজার ৫৮৫ ফুট উচ্চতার বেস ক্যাম্প ৪ এ অবস্থানকালে তিনি অক্সিজেন না নিয়েই থেকেছেন। এভারেস্টের চূড়ায়ও তিনি বেশির ভাগ সময় অক্সিজেন ছাড়াই অবস্থান করছিলেন। এতে বেশ চাপ অনুভব করলেও তিনি ব্যাপারটি কত কঠিন তা দেখার জন্যই অক্সিজেন মাস্ক না লাগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, অনেকেই অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট চূড়ায় উঠেন। তাদের অনুভূতিটা অনুভব করতেই আমি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কাজটি করেছি।

তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি জানিয়েছেন ভালোবাসা। তিনি বলেন, সবার শুভেচ্ছা ছিল বলেই হয়তো আমি একইসাথে দুইটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করে এখনো পারফেক্ট রয়েছি।

হালদা পাড়ের সন্তান ডা. বাবর আলী গত ১ এপ্রিল এভারেস্ট সামিটের উদ্দেশ্যে নেপালের পথে যাত্রা করেন। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিনি ৪ এপ্রিল কাঠমুণ্ডু থেকে ওড়ে যান লুকলায়। ওখান থেকে বেসক্যাম্পে গিয়ে ১০ এপ্রিল বেসক্যাম্পে পৌঁছান। নানা প্রক্রিয়া এবং শারীরিক সক্ষমতা যাছাইয়ের পর তিনি সামিট শুরু করেন। ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় ওড়ান বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। দুই দিন পর গত ২১ মে তিনি ৮ হাজার ৫১৬ মিটার উচ্চতার পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে জয় করেন। তিনি প্রথম কোন বাংলাদেশি যিনি একইসাথে দুইটি আট হাজার মিটার উঁচু পর্বত জয় করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি যিনি লোৎসে পর্বতে পতাকা ওড়ান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিলাইছড়ির বড়থলি ইউপি চেয়ারম্যান গুলিবিদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধকে এই আখতারুজ্জামান, যার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার