ফুটপাত দখল : নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে

| শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। ইতোপূর্বে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরের প্রায় অর্ধশত সড়কের ফুটপাত এবং মোড়ে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। ফলে সংকুচিত হয়েছে পথচারী হাঁটার পথ। অনেক সময় বাধ্য হয়ে পথচারীকে সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। অনেক ফুটপাতে ছাউনি নির্মাণ করা হলেও সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্যিক দোকান। সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের বিষয়টি প্রশংসনীয় হলেও ফুটপাত দখল করে দোকান ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় পুরো উদ্যোগটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদিকে, অভিন্ন সিএনএ প্রতিবেদন হিসেবে গত ৩রা নভেম্বর প্রকাশিত চট্টগ্রামের দৈনিকগুলোর তথ্যে জানা যায়, নগরীর বায়েজিদ থানাধীন তারা গেট ও শেরশাহ এলাকায় ফুটপাতের উপর সর্বমোট ১৮৯টি দোকান বরাদ্দ পরবর্তী নির্মাণের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের জের না কাটতেই নগরীর টেক্সটাইল মোড়ে পাঁচদিনের ব্যবধানে বারো ফুট প্রস্থের ফুটপাত দখল করে তৈরি করা হয়েছে আরও ৬৬টি পাকা দোকান। এসব পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে রাতের আঁধারে কাটা হয়েছে ফুটপাতে থাকা বেশকিছু গাছ। কৌশলে আরও কিছু গাছ দোকানের মধ্যে রেখেই দেয়াল তুলে ফেলা হয়েছে। সুযোগ বুঝে সেগুলোও কাটা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ তো পরের কথা উল্টো চট্টগ্রামে ফুটপাত দখলে সহযোগিতায় ব্যস্ত সিটি করপোরেশন (চসিক)। সিটি করপোরেশনের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পথচারী ও নগরবাসী। তাঁরা বলেন, ‘এখানে ফুটপাতের পুরোটাই দখল করে দোকান দেওয়া হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এতে করে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ অন্য এক পথচারী বলেন, ‘ফুটপাতে অ্যাকুরিয়ামসহ নানা দোকান দেওয়া হয়েছে। যা দেখতে দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এলাকাটিতে মানুষ বেশি থাকে। দোকানের কারণে ফুটপাত সরু হওয়ায় তখন পথচারীদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।’
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এটা দোকানদার ও হকাররা দখল করে রাখছে। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে।’ তাঁরা বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য। জামালখান এলাকার ফুটপাতের যে জায়গা এর অর্ধেকটা জুড়েই দোকান। কাজেই মানুষের হাঁটাচলার জন্য খুব অল্প জায়গা অবশিষ্ট আছে। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।’
ফুটপাতে দোকান বরাদ্দ দেয়া বৈধ নয় উল্লেখ করে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শহরের এমন কোনো সড়ক এবং ফুটপাত নেই যেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অতীতে মেয়র, প্রশাসকরা যেসব সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন তা বাতিল করা কঠিন। সিটি কর্পোরেশনকে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। মেয়র বলেন, সকালে ফুটপাত দখলমুক্ত করলে বিকালে আবার দখল হয়ে যায়। পুলিশের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। হয়তো সেই বিবেচনা থেকে অতীতে এসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে দোকানগুলো দেয়া হয়েছে অস্থায়ীভিত্তিতে। সড়ক সমপ্রসারণের প্রয়োজন হলে যেকোন সময় এসব দোকান উচ্ছেদ করা যাবে।
আগের মেয়র ফুটপাত ব্যবহারের জন্য যে অনুমতি দিয়ে গেছেন, সেটা বাতিল করতে দ্বিধায় আছেন বর্তমান মেয়র। আইনি জটিলতায় পড়তে হবে ভেবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা সত্যিই দুঃখজনক। ফুটপাতে যা করা উচিত নয়, সিটি করপোরেশনের সায় পেয়ে তা’ই করা হচ্ছে। ফুটপাতে দোকান থাকার কারণে মানুষকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এসব ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামায় না। নতুন মেয়র আসেন, নতুন নতুন অঙ্গীকার করেন, কিন্তু যেটা আছে, যেটা ছিল, সেটাই কেবল চলছে। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে মানুষের হাঁটার অধিকার হরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে