থেমে গেল মরক্কোর স্বপ্নদৌড়। সেমিফাইনালের বাধা পেরিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা আর হলো না আফ্রিকার দেশটির। সেমিফাইনালে গিয়ে থামতে হলো এবারের বিশ্বকাপের সবচাইতে বড় চমক মরক্কোকে। অপরদিকে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নিল। ব্রাজিলের পর ফ্রান্স এই কৃতিত্ব দেখাতে সমর্থ হল । গতকাল কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফ্রান্স। ফাইনালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল। খেলা যেখানে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে অপ্রতিরোধ্য মরক্কো গতকালও খেলেছে দুর্দান্ত। বল দখলে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের চাইতে অনেক এগিয়ে থাকলেও আক্রমণ কিংবা গোলের সুযোগ তেমন সৃষ্টি করতে পারেনি। ফ্রান্সের রক্ষণভাগের সামনে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে মরক্কোর আক্রমণগুলো। ফলে গোলে শট নিতে তেমনটা পারেনি মরক্কো। অপরদিকে ফ্রান্স নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করে ঘর সামলানোর পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণ করে মরক্কোকে ভুগিয়েছে।
সেই সাথে প্রাপ্ত সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নেয়। যদিও দলের সেরা খেলোয়াড় এমবাপে তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে অভিজ্ঞ গ্রিজম্যান, জিরুদরা ঠিকই দলকে জিতিয়ে ফাইনালে নিয়ে গেছেন। মরক্কো দ্বিতীয়ার্ধে দারুন উজ্জীবিত ফুটবল খেললেও দলের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার কারণে গোল আদায় করতে পারেনি। ফলে সেমিফাইনালে থেমে গেল মরক্কোর এবারের বিশ্বকাপের পথ চলা।
ম্যাচের শুরু থেকে ছিল গতির ঝড়। ফ্রান্স এবং মরক্কো দুই দলই গতির ঝড় তুলতে থাকে। তবে শুরুতে গোল পেয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের মাত্র ছয় মিনিট তখন। নিজেদের অর্ধ থেকে বল পেয়ে মরক্কোর ডি-বঙের ভেতর থেকে যে শর্ট নেন জিরুদ তা ফিরিয়ে দেন মরক্কো গোলরক্ষক। ফিরতি বলে হার্নান্দেজ যে শর্ট নেন তা জড়িয়ে যায় জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এবারের বিশ্বকাপে মরক্কোর জালে প্রতিপক্ষের প্রথম গোল।
অবশ্য ১০ মিনিটের সময় সমতা ফেরাতে পারতো মরক্কো। পরিকল্পিত এক আক্রমণ থেকে ডি-বক্সের বাইরে থেকে যে শট নেন উনাহির তা দারুন দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ফরাসি গোলরক্ষক। অবশ্য ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো ফ্রান্স ১৭ মিনিটে। নিজেদের অর্ধ থেকে বল পেয়ে জিরুদ যে শট নেন তা ফিরে আসে সাইডবারে লেগে। ৩৪ মিনিটে এমবাপে পেয়েছিলেন আরেকটি সুযোগ। এবার বাম প্রান্ত থেকে এগিয়ে গিয়ে যে শট নিয়েছিলেন তা মরক্কোর রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ফিরে আসে। ৪৪ মিনিটে সমতা ফেরানোর সবচাইতে সহজ-সুযোগটি হারায় মরক্কো। জিয়েসের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জিরুদের মাথা ঘুরে এসেছিল ইয়ামিদের সামনে। তিনি যে বাইসাইকেল কিক নিয়েছিলেন তা ফরাসি গোলরক্ষক ঠিক গোলে ঢুকার মুহূর্তে ফিরিয়ে দেন। ফলে এক গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয় মরক্কোকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে মরক্কো। বারবার আক্রমণে ফ্রান্স রক্ষণভাগকে একরকম তটস্থ করে তুলে। আর সেই সুযোগে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একাধিক সুযোগ সৃষ্টি করেছিল মরক্কো । কিন্তু হেকিমিরা সেসব সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি। বিশেষ করে ফরাসি ডি বঙে একাধিকবার সুবিধা জনক স্থানে থেকেও গোলে শট নিতে পারেনি হেকিমী, ওনাহি, নেসিরীরা। ৭১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্স। গ্রিজম্যানের ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বলে তুরাম যে হেড নিয়েছিলেন তা সাইডবার গেছে চলে যায় বাইরে। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সকে কোণঠাসা করে রাখলেও গোল আদায় করতে পারেনি মরক্কো।
উল্টো খেলার ৭৯ মিনিটে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে এমবাপের বাড়ানো বলে কুলু মুয়ানি দারুন এক শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। শেষ দিকে মরক্কোর স্ট্রাইকাররা চেষ্টা করেছেন বটে তবে সেই সব কোনো কাজে আসেনি। কারণ কোন গোল তারা আর পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে এখন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানের জন্য লড়াই করতে হবে এবারের বিশ্বকাপের চমক দেখানো আফ্রিকার দলটিকে।