ফাঁসি দিয়ে সমাজকে অপরাধমুক্ত করা যায় না : প্রধান বিচারপতি

| বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বিচারে সাজা বা ফাঁসি দিয়ে অপরাধ থেকে সমাজকে রক্ষা করা যায় না। সন্তান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির আপিলের শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। রায়ে মামলার আসামি মো. জসীম রাড়ির সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তবে শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এও বলেছেন, যেখানে অপরাধ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো, সেখানে আদালতকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে। খবর বিডিনিউজের।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ তখন শুনানি করছিলেন। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায়ের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরছিলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চে। তারই এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেনটেন্স (সাজা), হ্যাংগিং (ফাঁসি) কিন্তু সোসাইটিকে রক্ষা করে না। ইন্ডিয়ার ল অ্যান্ড অর্ডার (আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি) থেকে আমাদের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন কোনো অংশে খারাপ না। ইন্ডিয়া থেকে আমরা কোনো অংশে খারাপ না। ইন্ডিয়াতে ২০১৯ সালে ডেথ সেনটেন্স হয়েছে ১২১, আর আমাদের এখানে ৩২৭টি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ওয়াইফ কিলিং (স্ত্রী হত্যা) কি বন্ধ হয়েছে? ওয়াইফ কিলিংয়ে কোনো সাক্ষীও তো লাগে না। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) ডাক্তারের রিপোর্ট নিয়ে এলেই হাজবেন্ডের ফাঁসি, নইলে যাবজ্জীবন। আমার তো মনে হয় এটার একটা পরিসংখ্যান নেওয়া উচিত। ৮০ শতাংশ মামলায় হাজবেন্ডের সাজা হয়। এই যে সাজা হচ্ছে, ফাঁসি হচ্ছে, যাবজ্জীবন হচ্ছে, ওয়াইফ কিলিং কি কমেছে? সুতরাং এটা ভুল ধারণা যে সাজা দিলেই আমরা একদম দুধের মধ্যে ভাসতে থাকব। পরে শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যেখানে ডেথ সেনটেন্স (মৃত্যুদণ্ড) হবে, সেখানে তো ডেথ সেনটেন্স দিতেই হবে।
এদিকে, চার বছর বয়সী সন্তানকে হত্যার দায়ে ২০০৮ সালে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মো. জসীম রাড়িকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল জজ আদালত। পরে হাই কোর্টেও সেই রায় বহাল ছিল। হাই কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থেকে জেল আপিল করেন জসীম রাড়ি। ওই আপিল আংশিক মঞ্জুর করে গতকাল রায় দিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চ।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে জসীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে কারাগারে থাকা জসীম ইতোমধ্যে সেই সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। সে কারণে সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বলেছে, অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে তাকে যেন অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ পরে সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ জসীমকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তি বহাল না রেখে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার দ্বিতীয় অংশ অনুযায়ী ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন।
জসীমের পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা। ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিলের মধ্যে মেহেন্দীগঞ্জে জসীমের শিশু সন্তান শামীমকে হত্যার ঘটনা ঘটে। জসীম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরোধীদলীয় নেতা-উপনেতাকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধউচ্ছেদ করা জায়গা দখলমুক্ত রাখতে মনিটরিং জোরদার চসিকের