ফটিকছড়িতে লকডাউন

অভ্যন্তরীণ যানবাহন হাইওয়েতে উঠতে পারবে না ।। রাত ৮টার পর নগরীর হোটেল, দোকানপাট বন্ধ ।। সড়কপথে চলাচলকারী ঢাকাগামী গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ জুন, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলা আট দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাকি উপজেলা ও নগরীর আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সব দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্রও। এ সময় সরকারি, আধা সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে খোলা থাকছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সভা গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ ঘোষণা দেন। কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বিসহ কমিটির অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ দিনে ফটিকছড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, বুধবার (আজ) সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ফটিকছড়ি লকডাউন থাকবে। এ সময় ফটিকছড়ির অভ্যন্তরীণ যানবাহন হাইওয়েতে উঠতে পারবে না। কাঁচাবাজার খোলা থাকবে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত। বাকি সময় বন্ধ থাকবে। ওষুধের দোকান লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। সকল ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করা যাবে।
তিনি বলেন, একই সময়ে (২৩-৩০ জুন) নগরীর সকল দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার পর থেকে বন্ধ থাকবে। এসব তদারকিতে প্রতিদিন মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের ১২টি টিম। হোটেল-রেস্টুরেন্টে ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ লোকজনকে খাবার পরিবেশন করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। বিষয়টি খুবই খারাপ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৫০ শতাংশের বেশি লোকজনকে খাবার পরিবেশন বন্ধ থাকবে। যদি এর বেশি লোকজনের জমায়েত ঘটে তাহলে জরিমানা করা হবে। পূর্বের মতো হবে না। জরিমানার পরিমাণ অনেক বাড়বে। কারাগারে জায়গা নেই। তাই কারাগারে পাঠানো হবে না। একই কাজের পুনরাবৃত্তি যদি কেউ করেন তাহলে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, দেখা যাচ্ছে, অলিগলির ভেতরে থাকা ক্লাব-কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে, বৌ-ভাতসহ নানারকম অনুষ্ঠান হচ্ছে। এসব বন্ধ থাকবে। কোনো আয়োজন হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। প্রয়োজন হলে বাকি উপজেলাকে লকডাউন করা হবে। তিনি বলেন, পূর্বের মতো করোনা নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার কাজ চালাবে জেলা তথ্য অফিস।
সভায় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের যুক্ত করে করোনা প্রতিরোধ করার জন্য মেয়রকে অনুরোধ জানান তিনি। একই সাথে পতেঙ্গা সৈকতে যাতে কেউ প্রবেশ না করে, জনসমাগম করতে না পারে তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকে অনুরোধ করা হয়। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সড়কপথে চলাচলকারী ঢাকাগামী সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ থাকবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার অভ্যন্তরের সকল ধরনের গণপরিবহন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে।
সভায় সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ঈদের সময় মার্কেট, বিপণী বিতান ও শপিংমলসমূহ খোলা রাখার কারণে চট্টগ্রামে কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। মহানগরীর পাশাপাশি জেলার ফটিকছড়ি, মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালীসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা রোগীদের সুচিকিৎসায় আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল-২, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা সকলে মাস্ক পরিধানসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সচেতন হলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৯০ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষায় নগরী ও জেলায় ২২৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। সনাক্তের হার ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. সুমনী আক্তার, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. উ খ্যে উইন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আবদুল্লাহ আল মাসুম, সিএমপির এডিসি (সিটি এসবি) মির্জা সায়েম মাহমুদ, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মান্নান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক, জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ হাসান, জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী, জেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মো. নুরুল হায়দার, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক, সিটি কর্পোরেশনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া এবং পোগ্রাম অর্গানাইজার গাজী মো. নূর হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬