প্রয়োজন দেশব্যাপী প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা

| রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। সারাবিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবস পালন করা হয়। সাধারণত স্বাস্থ্য ও সুস্থতার কথা চিন্তা করলেই আমাদের মনে প্রথমেই আসে শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি। কিন্তু শরীর এবং মন এ দুই নিয়ে হচ্ছে মানুষ। শরীরবিহীন যেমন মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি মনবিহীন মানুষও অসম্ভব। সুস্থ-সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে গেলে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে ভুলে যাই। তাই আমরা মনে করি, সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে কথা না বলার প্রবণতাকে দূর করতে আমাদের এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। এই দিবস পালনের উদ্যোগটি মানুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও মানসিক অসুস্থতার বিষয়ে ভুল ধারণা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের মন, আচরণগত ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের দিকটি। আমরা কী চিন্তা করি, কী অনুভব করি এবং জীবনকে সামলাতে কীরকম ব্যবহার করি এগুলোই আসলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। একজন মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে এবং কখনোই কিছু আবেগ যেমন রাগ, ভয়, হিংসা, অপরাধবোধ বা উদ্বেগ দ্বারা আবিষ্ট হবে না। জীবনে যখন যেরকম চাহিদা আসে তা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা তারা রাখে। শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই যদি একজন বিভিন্ন নেতিবাচক আবেগ যেমন উদ্বেগ বা ভয় দ্বারা আবিষ্ট থাকে, তাহলে এই আবেগগুলো তাকে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে দিতে পারে এবং সঠিক সময়ে সাহায্য না নিলে এগুলি কিন্তু পরবর্তী কালে মানসিক অসুস্থতা হয়ে দাঁড়াবে যেমন ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা বা জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিসর্ডার বা সাধারণ উদ্বেগ ব্যাধি।
বিবিসি বাংলা পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তারা জানিয়েছেন যে, কিছু বদ্ধমূল সামাজিক ধারণার কারণে এখনও অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নানা জটিলতায় ভুগলেও তিনি চিকিৎসকের কাছে তখনই গিয়েছেন যখন পরিস্থিতি গুরুতর। একদম আত্মহত্যার প্রবণতায় পৌঁছে গেছে। সমস্যার শুরুতে তিনি যেমন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। তেমনি তার আশেপাশের মানুষও মনে করতেন, এমনটা সবারই হয়, মানসিক রোগ বলে কিছু নেই। ২০১৮-১৯ সালের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১৭% বা ২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। এবং ১০০ জনের মধ্যে ৭ জন ভুগছেন বিষণ্নতায়। অথচ অবাক করা বিষয় হল, এর ৯২%-ই রয়েছেন চিকিৎসার আওতার বাইরে। অন্যদিকে ১৩.৬% শিশুও মানসিক রোগে ভুগছে বলে জরিপে উঠে এসেছে, যাদের ৯৪% কোন চিকিৎসা পাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেকোনো শারীরিক রোগকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলেও মানসিক সমস্যাকে বাংলাদেশে এখনও ঠাট্টা, বিদ্রূপ বা হালকা বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। মানসিক সমস্যা প্রকট আকার না নেয়া পর্যন্ত বেশিরভাগই চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এখানে মানুষ তখনই ডাক্তারের কাছে আসে যখন পরিস্থিতি অনেক গুরুতর। কেউ আছেন কুসংস্কারের কারণে আসতে চান না। আবার অনেকে জানেনই না যে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।’
তাই সবকিছু বিবেচনায় এনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের এখনই প্রয়োজন দেশব্যাপী অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্যসেবাটা নিশ্চিত করা। বর্তমান যুগের মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। টেলি-স্বাস্থ্যসেবার ধারণা এখন ভৌগোলিক দূরত্বের সমস্যা দূর করে সেবাদানকারী ও গ্রহণকারীকে কাছে নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে এখন সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রামেও প্রাথমিক সেবা পৌঁছানো সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে