প্রস্তাবিত এইচএসসি পরীক্ষায় ঐচ্ছিক বিষয় নিয়ে গভীর উৎকন্ঠায় শিক্ষার্থীরা

হাসানুল ইসলাম | রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সুদীর্ঘ কাল ধরে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। কেননা, একজন শিক্ষার্থীর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পঠিত বিষয়সমূহে অর্জিত শিখনফল বা দক্ষতার উপরই নির্ভর করে তার উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ ও গতি-প্রকৃতি তথা তার স্বপ্নের ক্যারিয়ার। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তি- এই তিনটি বিষয় সকল শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা আবশ্যিক। অনুমোদিত অন্যান্য বিষয়গুলো হতে যে কোনো একটিকে নৈর্বাচনিক বিষয় হিসেবে নিতেই হয় এবং অন্য একটিকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বিজ্ঞান শাখার প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী গণিত ও জীববিদ্যা- এই দু’টি বিষয়ের একটিকে নৈর্বাচনিক এবং অন্যটিকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করলেও দু’টি বিষয়কেই তারা সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ে থাকে যাতে উচ্চ শিক্ষাস্তরে চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যাসহ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে কোনো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ অবারিত থাকে। আবার পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ বিষয় হতেও সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করে যাতে কথিত গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেতে পারে সে জন্যও তারা বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অধ্যয়ন করে। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে আমি এমন অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছি যাদের উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ বিষয় ছিল গণিত কিন্তু ভর্তি হয়েছে বুয়েটে। আবার উচ্চ মাধ্যমিকে জীববিদ্যাকে চতুর্থ বিষয় হিসেবে নিয়েও অনেককে মেডিকেল কলেজে পড়তে দেখেছি। কারণ, ভর্তির সময় কোনো একটি বিষয়কে অভিভাবকগণের পরামর্শে অবশ্যিক হিসেবে নিলেও পরবর্তীতে নানান বাস্তবতায় শিক্ষার্থীর মনোভাব বদলে যায়। মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখার বিষয়গুলোতে অনুরূপ প্রেক্ষাপট বিদ্যমান। গতকাল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা/এসাইনমেন্ট নেয়ার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন তাতে কেবল নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। এতে চতুর্থ বিষয় নিয়ে কোনো বক্তব্য ছিলো না, বিজ্ঞ সাংবাদিকগণও কোনো প্রশ্ন করেননি। ফলে চতুর্থ বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে। চতুর্থ বিষয়ে পরীক্ষা না হলে সে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল থেকে চট্টগ্রাম কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছ। তাদের দাবি হলো- ফরম পূরণের সময় নৈর্বাচনিক ও চতুর্থ বিষয় পরিবর্তন (অদল-বদল) করার সুযোগ দেয়া হোক। বিষয় ম্যাপিং এ চতুর্থ বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক কিংবা চতুর্থ বিষয়েও পরীক্ষা/এসাইনমেন্ট নেয়া হোক। এসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পূর্বেই তারা এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা চায়। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ভাববেন এবং আমাদের কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণের দুশ্চিন্তা দূর করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষ মানুষের জন্য
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে