দক্ষিণ চট্টগ্রামের পিএবি তথা পটিয়া আনোয়ারা বাঁশখালী সড়ক পর্যায়ক্রমে মহাসড়কে রূপ লাভ করছে। যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেছে। রাস্তার উপর যেনতেনভাবে গাড়ি পার্কিং ত আছেই। সাথে রাস্তার পাশে ভাসমান অস্থায়ী দোকান বসা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই আছে। বিশেষ করে ফকিন্নির হাট, চাতুরী চৌমুহনী, তৈলারদ্বীপ সরকারহাট, চাঁনপুর, গুণাগরী, বৈলছড়ী খান বাহাদুর বাজার, জলদী উপজেলা সদর, চাম্বলের দিকে সকালের হাট, বারিহাটসহ অনেক এলাকায় যানজট অনেকটা নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। এক দেড় ঘণ্টা যাতায়াতের স্থলে ২/৩ ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় লাগছে। রাস্তায় সময়ের অপচয় হচ্ছে। মানুষের নিত্য নৈমত্তিক কর্মসূচিতে ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যাঘাত হচ্ছে কর্মস্থলে যথাসময়ে উপস্থিত হতে।
সরকারের রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এটি পুলিশের সারা দেশব্যাপী আলাদা বিভাগ। এই বিভাগে রয়েছে আলাদা যানবাহন ব্যবস্থা। তারা বর্তমানের চেয়ে আরও দৃঢ় কর্মতৎপরতা না হলে এ যানজট বাড়বে বাদে কমবে না। ফলে বাড়তে থাকবে হাজার হাজার জনগণের দৈনন্দিন ভোগান্তি।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে কক্সবাজার যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল সাগরপথে স্টিমার। বাংলাদেশ আমলে পর্যায়ক্রমে স্থলপথে যাতায়াত দ্রুততার সাথে বেড়ে যায়। তেমনিভাবে চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে কক্সবাজার যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম কালুরঘাট সেতু হয়ে ৩০/৪০ কি.মি ঘুরপথ দিয়ে আরাকান মহাসড়ক হয়ে। সে লক্ষ্যে ১৯৫০ এর দশকে সেতুকে সংস্কার করে রেলের সমান্তরালে সড়কের যানবাহন যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়।
পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে বর্তমান শাহ আমানত সেতুর নিকটতম স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণ করে কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ চট্টগ্রামে পশ্চিম দিকে জনগণের কল্যাণে মহাসড়ক নির্মাণে মাটির কাজও অনেকটা এগিয়ে যায়। কিন্তু ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে কর্ণফুলী নদীতে একটি জাহাজ নোঙর ছিড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাসমান সেতুর উপর আছড়ে পড়ে। এতে নতুন নির্মিত এ ভাসমান সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাক বাহিনী বেলি ব্রীজের অংশগুলো খুলে খুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুতে সংযোগ দিতে অপচেষ্টা চালায়।
কালুরঘাট সেতু হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পূর্ব দিকে বোয়ালখালী পটিয়া হয়ে এ মহাসড়ক দক্ষিণ চট্টগ্রামের পশ্চিম পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীর লাখ লাখ জনগণের তেমন উপকারে আসছে না। মানুষ স্থলপথে দক্ষিণপাড়ে এসে সাম্পানে কর্ণফুলী নদী পারাপার করতে থাকে। সরকার জনগণের চাহিদার গুরুত্ব অনুধাবন করে।
ভাসমান সেতুর নিকটে নেদারল্যান্ডের পরিত্যক্ত সেতু পশ্চিম পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী জনগণের কল্যাণে উপহার দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের পাশাপাশি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে আবারও কর্ণফুলীতে একটি নোঙর করা জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ ব্রীজের উপর আছড়ে পড়ে। ব্রীজের অংশবিশেষ ভেঙ্গে নিয়ে যায়। ফলে পশ্চিম পটিয়া আনোয়ারা বাঁশখালীর যাতায়াতে আবারও প্রতিকূলতা নেমে আসে। এ ব্রীজ মেরামত হতে দীর্ঘ সময় নেয়। অতঃপর সরকার ঐ ব্রীজ সংলগ্ন কংক্রিট ও ক্যাবল ষ্টেইড ব্রীজ নির্মাণ করে। বন্দরের কল্যাণে নদীতে যাতে কম পিলার স্থাপন করতে হয়। সেজন্য এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ শাহ আমানত সেতু নির্মাণ করে।
এতে আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার যাতায়াতে কালুরঘাট সেতুর ব্যবহার স্বভাবতই পরিহার হয়ে যায়। শাহ আমানত সেতু পার হয়ে আরাকান মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার যাতায়াত অনেকটা ৩০/৪০ কি.মি ঘুর পথ হয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালীর কল্যাণে (পিএবি) সড়ক হিসেবে নামধারণ করে সরকারের দৃষ্টিতে পড়ে। সরকারও জনগণের কল্যাণে গুরুত্ব দিতে থাকে। এ সড়কের সাথে পেকুয়া উপজেলা ও পশ্চিম চকরিয়া যোগ হয়ে যায়। ফলে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, মাতারবাড়ী, বদরখালীসহ, পেকুয়া উপজেলার লাখ লাখ জনগণ পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করছে।
মহেশখালী, বদরখালী, মগনামা, পেকুয়া, টইটং বিভিন্ন কোম্পানীর বাস কাউন্টার রয়েছে। টিকেট কেটে হাজার হাজার মানুষ বাসে করে অথবা সিএনজি করে বাঁশখালী-আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করছে। যা ১৫/২০ বছর আগেও ছিল না। এতে পশ্চিম পটিয়া আনোয়ারা-বাঁশখালী সরু সড়কের উপর ব্যাপক চাপ পড়ে। এতেও তত অসুবিধা হওয়ার কথা নয় রাস্তার প্রস্থতা অবকাঠামো অনুপাতে।
কিন্তু দেশের সড়ক বিভাগে মানুষ আইন মানছে না। আইন না মানাই রেওয়াজ। ফলে সারা দেশে যত্রতত্র সড়কের উভয়পাশে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং, গাড়ি মেরামত, হাট বাজার বসা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। যা বছর বছর বাড়ছে বাদে কমছে না। এই অবস্থা (পিএবি) সড়কে ভয়াবহ রূপ লাভ করে। মানুষ চট্টগ্রাম থেকে বাঁশখালী উপজেলা সদরে যেতে মাত্র এক দেড় ঘণ্টার স্থলে ২/৩ ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় যাচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ এ (পিএবি) সড়কে তৎপরতা না বাড়ালে আগামীতে যানযটের কি অবস্থা দাঁড়াবে বলা মুশকিল।
কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ সমাপ্তি বলা যাবে। টানেলের দক্ষিণ মুখ থেকে ৫/৬ কি.মি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়কে সংযোগ দেয়া হয়েছে। পশ্চিম পটিয়া ওয়াই জংশন (ক্রসিং) থেকে দক্ষিণ দিকে ৮/১০ কি.মি মাত্র (পিএবি) সড়ক ৬ লেইনে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে সারা বাংলাদেশের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে পরিহার করে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারার বিশাল সড়কে এসে যাবে। এরপরে কক্সবাজার কোন সড়ক দিয়ে কিভাবে যাবে তা অস্পষ্ট।
ওয়াই জংশন (ক্রসিং) থেকে কক্সবাজার ২ লাইনের সড়ককে ৪ লাইনের উন্নীত করার ঘোষণা ঢাক ঢোল লেখালেখি থাকলেও বাস্তবে কবে শুরু হবে তা অনিশ্চিত। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে আনোয়ারা এসে সারা বাংলাদেশের জনগণের দৃষ্টি থাকবে কম দূরত্ব বিধায় বাঁশখালী পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার যেতে। ফলে বাঁশখালী উপজেলায় একমাত্র সড়কের ভয়াবহ যানজট ব্যাপকতা লাভ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পিএবি সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তা বাস্তবে রূপ লাভ করতে আগামীতে আরও কত বছর সময় নিবে তা অস্পষ্ট। এখানে পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারা চাতুরী চৌহমনীসহ বড় বড় জংশনে ফ্লাইওভার অত্যাবশ্যক, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। বস্তুত, পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী দক্ষিণ চট্টগ্রামের অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পর্যায়ক্রমে মহাসড়কে রূপ লাভ করছে। যাওয়া-আসা করতে দৈনন্দিন হাজার হাজার জনগণ যাতায়াত করছে।
কাজেই এ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জংশনগুলোতে অবৈধ গাড়ি পার্কিং, হাট বাজার যাতে বসতে না পারে মত সেই লক্ষে হাইওয়ে পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, গবেষক।