প্রথমে দেয়া হয় আগুন, তারপর কাটা হয় গাছ

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | রবিবার , ২৬ মে, ২০২৪ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

সবার অগোচরে প্রথমে গাছের গোড়ায় খড়কুটো দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গাছগুলো মরে গেলে কয়েকদিন পর এসে তা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন অভিনব কায়দায় বিভিন্ন সময়ে শতাধিক বৃক্ষ নিধনের অভিযোগ উঠেছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনাকদমতলী ইউনিয়নে। গতকাল শনিবার সরেজমিনে গেলে চন্দ্রঘোনা আধুরপাড়াস্থ গুমাইবিল চাষি সড়কে এরকম বেশ কিছু গাছে আগুন লাগিয়ে দেয়ার সত্যতা মিলেছে। এমনকি সম্প্রতি ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে যাওয়ার সুযোগে অনেক ভালো গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলেও স্থানীয়রা জানান। কিছু গাছ পরিষদের উদ্যোগে নেয়া হলেও বেশিরভাগ গাছ দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। পরিবেশ রক্ষায় এসব গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চন্দ্রঘোনা আধুর পাড়া সংলগ্ন তিন কিলোমিটার দীর্ঘ গুমাই বিল চাষিসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ রয়েছে। যা প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ঐতিহ্যবাহী গুমাইবিলের হাজার হাজার কৃষক তাদের কৃষি কাজের ফাঁকে এই গাছগুলোর ছায়ায় বিশ্রাম নেন। এছাড়া বিকাল হতেই সড়কের প্রাকৃতিক এই মনোরম দৃশ্য উপভোগে ছুটে যান বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সম্প্রতি এই গাছগুলোর গোড়ায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে মেরে ফেলে তা কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এতে সড়কের সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শুধু এই সড়কেই নয়, গুমাইবিলের অন্যান্য সড়কেও একই প্রক্রিয়ায় বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটে চলেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে নিধন করার অভিনব কায়দার কথা উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এরকম কিছু ছবি ফেসবুকে তুলে ধরেছেন রনি খান নামে এক ব্যক্তি। তার পোস্টের নিচে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়ে কমেন্ট করেন। মোহাম্মদ জমির নামে একজন লেখেন, যারা গাছ লাগায়, তারাই জানে একটা গাছ বড় করতে কত রকমের কষ্ট করা লাগে। আফসোস মানুষের বিবেক যে কখন জাগবে, আল্লাহ ভালো জানেন। সবই এলাকার মানুষের কাজ। মোহাম্মদ ইব্রাহিম ফয়সাল নামে অন্য একজন লিখেন, প্রতিবছর এই সময়ে আগুন দিয়ে গাছগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। এটি নিরসনে কারো কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যায় না।

স্থানীয় শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, কৃষকেরা তীব্র রোধের মধ্যে কাজের ফাঁকে সড়কগুলোর গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন। কিন্তু কিছু অসাধু ও পরিবেশ ধ্বংসকারী লোক বিভিন্ন উপায়ে গাছগুলো পুড়ে আস্তে আস্তে মেরে ফেলে। পরে তা কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এভাবে ইতিমধ্যেই শতাধিক গাছ এই জঘন্য উপায়ে শুধুমাত্র গুমাইবিল চাষি সড়ক থেকেই কেটে নিয়ে গেছে অসাধুচক্রটি।

আবদুল আজিজ নামে একজন জানান, এহেন জঘন্যতম কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিছ আজগর জানান, ১৯৯১ সালে ইউসুফ ভাই যখন এমপি ছিলেন তখন এই চাষিসড়কসহ চন্দ্রঘোনা ছুফি পাড়া সড়ক, চন্দ্রঘোনা ইউপি সড়ক এবং অঞ্জলির মার সড়কে এনজিও সংস্থা পদক্ষেপের মাধ্যমে গাছগুলো আমি নিজ উদ্যোগে রোপণ করেছিলাম। ১৫ জন গ্রামীণ মহিলা তিন বছর পাহারা দিয়ে গাছগুলো বড় করেছিল। এখন এসব সড়কের প্রায় সব গাছ দুর্বৃত্তরা কেটে সাবাড় করেছে। চাষিসড়কে কিছু গাছ আছে। এসবও এখন নানা উপায়ে দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, চাষিসড়কের ৩৯টি উপযুক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাহায্যে কেটে নতুন চারা রোপণের জন্য উপজেলার মাসিক সভায় প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বনবিভাগকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরবর্তীতে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন একটি একটি করে সব গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। আমি আগামী সভায় বিষয়টা উপস্থাপন করবো এবং যারা এসব গাছ নষ্টের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুজরাটে ‘গেম জোনে’ অগ্নিকাণ্ড, নিহত ২৭
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচশ খামারে কোরবানের জন্য প্রস্তুত পাঁচ হাজার গরু