প্রত্যাবাসানের পক্ষে কাজ করায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা?

পরিবারের সন্দেহ আরসাকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিন্দা

উখিয়া ও টেকনাফ প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বুধবার রাতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের গুলিতে নিহত শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে পুলিশি পাহারায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অসংখ্য রোহিঙ্গা অশ্রুসিক্ত চোখে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার পর দিনও মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও পরিবারের সন্দেহের তীর রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ আরসার দিকে। এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সেবা সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতি কম পরিলক্ষিত হয়েছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশি তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সনজুর মোরশেদ বলেন, এখনো মামলা হয়নি, তবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গানেতা শিক্ষক মুহিবুল্লাহ হত্যার পেছনে কয়েকটি ইস্যুর কথা জোরেসোরে আলোচিত হচ্ছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিরোধী ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি’ এর সঙ্গে জোটে অংশ নেওয়া, মর্যাদা নিয়ে রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার মত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে সচেতন রোহিঙ্গাদের দাবি।
এদিকে নিহতের ছোট ভাই মৌলভী হাবিবুল্লাহ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) মুহিবুল্লাহকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ৫/৬ জন সশস্ত্র আরসা সন্ত্রাসী আমার ভাইকে গুলি করে খুন করেছে। খুনিদের কয়েকজনকে আমি স্পষ্ট চিনতে পেরেছি। তবে আরসা প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ জুনুনীর বরাত দিয়ে সংগঠনটির মুখপাত্র সোয়াইব এক অডিও ক্লিপে জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তাদের কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা নেই। সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা
ইউএনএইচসিআর : আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কঙবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা মুহিবুল্লাহর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে ইউএনএইচসিআর গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মুহিবুল্লাহর পরিবার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ : অবিলম্বে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেছেন, মুহিবুল্লাহর মৃত্যুতে তারা একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারিয়েছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য মুহিবুল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ড স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে স্বাধীনতার পক্ষে ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডসহ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার তদন্ত দাবি করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবির ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ চবিতে
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি চ্যানেলে ক্লিনফিড বাস্তবায়নে শুক্রবার থেকে মোবাইল কোর্ট : হাছান