প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের ইন্তেকাল

| বুধবার , ১০ মে, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

চলে গেলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, যাকে বাংলাদেশের সেরা অর্থনীতিবিদ মানেন অনেকে। নুরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৯৪ বছর বয়সে ওয়াশিংটনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার রাতে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

নুরুল ইসলামের জন্ম ১৯২৯ সালে চট্টগ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে, তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি স্কুলশিক্ষক। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনে বসবাস করছিলেন।

বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, উনার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত হয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে তিনি যে বাসায় থাকেন, তার পাশের বাসায় থাকেন আমার বন্ধু ড. আহমেদ আহসান সাহেবের কাছ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। খবর বিডিনিউজের।

পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু বাঙালির বৈষম্যের অবসানের দাবিতে যে ৬ দফা ঘোষণা করেছিলেন, তাতে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন শিক্ষক নুরুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন নুরুল ইসলাম। স্বাধীনতার পরপরই দেশে ফিরে আসেন তিনি। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর তার নেতৃত্বে যে পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়েছিল, তাতে তার পরের পদ অর্থাৎ ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন নুরুল ইসলাম। ওই কমিটিতে সদস্য ছিলেন অর্থনীতিবিদন মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও রেহমান সোবহান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকোণ্ডের পর বিরূপ পরিস্থিতিতে বিদেশে পাড়ি জমান নুরুল ইসলাম। এরপর আর স্থায়ীভাবে দেশে ফেরেননি তিনি।

পাঁচ বছর আগে ঢাকায় নুরুল ইসলামের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘অ্যান অডিসি জার্নি অব মাই লাইফ’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেছিলেন, নুরুল ইসলাম একজন পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের অমর্ত্য সেন হতে না পারার কোনো কারণ তার ছিল না। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও সেই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি উনাকে দেখি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত দেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে।

নুরুল ইসলামের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫টির বেশি। তার মধ্যে রয়েছে করাপশন, ইটস কন্ট্রোল অ্যান্ড ড্রাইভারস অব চেঞ্জ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ: এ প্রাইমার অন পলিটিক্যাল হিস্ট্রি। তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক উন্নয়ন অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন নুরুল ইসলাম। সর্বশেষ তিনি খাদ্য নীতি বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইমিরেটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার আগে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করেন তিনি। ইয়েল, অঙফোর্ড, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি এবং লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসেও পড়িয়েছেন তিনি। নুরুল ইসলামের কর্মজীবনের শুরু পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিতে। সংস্থার প্রথম বাঙালি পরিচালক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিআইডিএস গঠিত হলে তার প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে বিআইডিএস শোক জানিয়েছে। এক শোক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটি তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

নুরুল ইসলাম স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে রুমিন ইসলাম বিশ্ব ব্যাংকে অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালতে কাউন্সিলর খায়েরের জবানবন্দি
পরবর্তী নিবন্ধআমের ‘নতুন রাজধানী’ খাগড়াছড়ি