আমের ‘নতুন রাজধানী’ খাগড়াছড়ি

দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ১০ মে, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে আম অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। অনুকূল আবহাওয়া ও পাহাড়ের মাটি আম চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আম উৎপাদনের নতুন রাজধানী এখন খাগড়াছড়ি। জেলা সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, গুইমারা, পানছড়িসহ ৯ উপজেলায় বাড়ছে আমের আবাদ। জেলায় ছোট বড় আম বাগানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আর এ খাতে জড়িত অন্তত ২০ হাজার মানুষ।

জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের ভুয়াছড়ি সড়কের পাশে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন কৃষক মংশিতু চৌধুরী। প্রায় ত্রিশ একর জায়গা জুড়ে বাগান করেছেন তিনি। অন্তত ৪ হাজার গাছে আমের ফলন এসেছে। মোট ৪০ প্রজাতির আমের গাছ লাগানো হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে ২০ প্রজাতির আম। আম্রপালি, ব্যানানা, মিয়াজাকি, হাড়িভাঙার ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ থেকে ৬০ টন বলে জানিয়েছে এই কৃষক। তিনি বলেন, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি ও শ্রমিকের বাড়তি মজুরীর কারণে উৎপাদন খরচও বেশি। উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। ভালো ফলন হওয়ায় খুশি তিনি। আম বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন এই কৃষক। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো আমের ফলন এসেছে কৃষক জুপিটার চাকমার বাগানে। জেলা সদরের তেঁতুল তলা এলাকা ৭ একর পাহাড়ি ভূমিতে অন্তত ১ হাজার আমের চারা লাগিয়েছেন তিনি। জুপিটার চাকমা বলেন, ৪ বছর বয়সী এই বাগানে চলতি মৌসুমে পরিচর্যা ও কীটনাশক বাবদ ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মতো উৎপাদন খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রথম বার ফলন আসায় কী পরিমাণ উৎপাদন হবে তা বুঝতে পারছি না।

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের জোরমরম ও বানছড়া এলাকায় চাষির সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন। পুরো এলাকায় আম চাষ হয়েছে। ছোট বড় আম বাগান গড়ে তুলেছেন চাষিরা। সুজন চাকমা ২০০৭ সালে এই এলাকায় প্রথম বাগান গড়ে তোলেন। বিশ একর পাহাড়ি টিলাতে তিনি ২ হাজার আম গাছ রোপণ করেন। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০০ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এই কৃষক বলেন, ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দেওয়ার পরও ৩৫ লাখ টাকার মতো লাভ হবে। তবে সেচ সংকট ও আম পরিবহনে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে আমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে জানান তিনি। সরেজমিনে বানছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট টিলা পাহাড়। এসব পাহাড়ে চাষ হয়েছে আম্রপালি, রাংগুয়ায়, বারি৪ সহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। প্রতিটি বাগানে আম ঝুলছে। এলাকার স্থানীয় আম চাষি সুমন চাকমা, প্রশান্ত চাকমা ও কিরণময় চাকমা জানান, প্রতিটি পরিবার আম বাগান গড়ে তুলেছে। প্রতিবছরই আমের বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি একর জমিতে ২ থেকে ৫ টন পর্যন্ত আম উৎপাদন হয়। প্রতিটি পরিবার আম বাগান থেকে ২ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে।

খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ কিশোর কুমার মজুমদার জানান, খাগড়াছড়ি আম উৎপাদনকারী জেলা। এই জেলার ভূমির গঠন ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল। উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। জেলায় এবার ৩ হাজার ৭৯৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১২ টন। সেই হিসেবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আম্রপালি, রাংগুয়াই, বারি৪ সহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পাঠানো হয়। চলতি মৌসুমে কৃষক আম বিক্রি করে লাভবান হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের আম উৎপাদানের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন : তথ্যমন্ত্রী