প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও স্টল দুটোই বাড়ছে

অমর একুশে বইমেলা কাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে এবার ইটের বদলে ত্রিপল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

অমর একুশে বইমেলা২০২৩ আগামীকাল বুধবার নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে শুরু হচ্ছে। ২১ দিনব্যাপী এবারের মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও স্টলের সংখ্যা দুটোই বাড়ছে। এবার ১০৮ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১৪০টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে ডাবল স্টল ৩২টি এবং সিঙ্গেল স্টল ৭৬টি। গতবার ছিল ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল। অর্থাৎ ১৩ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং ২০টি স্টল বাড়ছে এবার। মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন হবে ১ লক্ষ ২ হাজার ৩০০ বর্গফুট।

মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্পসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করবেন। সম্মিলিত উদ্যোগে এবারের মেলাটি চতুর্থ আয়োজন। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মেলার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদকে উৎসাহ করে এমন বই মেলায় রাখা হবে না। চট্টগ্রামের লেখকপ্রকাশকপাঠক এবং নাগরিক সমাজের দীর্ঘকালের চাওয়া ছিল ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজনের। সম্মিলিত উদ্যোগে একটি বইমেলার আয়োজন ছিল চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। সে আকাঙ্ক্ষা থেকেই এবারও চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং লেখকদের সাথে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই মতবিনিময় সভা করে সম্মিলিত উদ্যোগে একটি বইমেলা অনুষ্ঠানের প্রয়াস নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠলেও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও শত সীমাবদ্ধতায় সিটি কর্পোরেশনের এ আয়োজনে সবাইকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যাত্রায় সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

মেয়র বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই আজকাল মোবাইলে ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই অন্যতম বন্ধু, যা তাদের মোবাইল ও মাদকের আসক্তি থেকে বের করে সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে মাবাবা, শিক্ষক ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা আমাদের ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বর্তেছে।

অতীতে মেলা প্রাঙ্গণে ইট বিছানো হলেও এবার ত্রিপল বিছানো হচ্ছে। এতে ধুলোবালি এবং বৃষ্টি হলে পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, ইট হলে ভালো হতো। তবে কাল একদিন সময় আছে। একদিনে সম্ভব না। ইট বিছানো না হলেও বালি না ওঠার মতো ব্যবস্থা করব। খেয়াল রাখব যেন ধুলোবালি না হয়। আশা করি হবে না।

লিখিত বক্তব্যে মেলার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে মেয়র জানান, এবারও মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু কর্নার। লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার এবং ওয়াইফাই জোন। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে। কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা হবে। আলোচনা সভায় বাঙালির সাহিত্যইতিহাসঐতিহ্যসহ নানান বিচিত্র বিষয়ের সমাহার ঘটানো হয়েছে।

এছাড়া মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশুকিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্রনজরুললোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোক নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও দেশের গানের আয়োজন করা হবে। এবারের মেলায় থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, মঞ্চ ও সেলফি কর্নার। মেলা পরিষদের কক্ষ, সুপরিসর মিডিয়া সেন্টার, হেলথ কর্নার, ফায়ার সার্ভিস, অভ্যর্থনা কক্ষ, টিভি বুথ, এটিএম ব্যাংকের বুথ, সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ থাকবে।

মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রমের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপপরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী উপস্থিত থাকবেন। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্ববোধক গান পরিবেশিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অমর একুশে বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, মেলা কমিটির সদস্য সচিব লুৎফুন নাহার, চসিক শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ, শাহ আলম নিপু, আলী প্রয়াস, শুকলাল দাশ, শামসুদ্দিন হারুন, আইয়ুব সৈয়দ, আজাদ বুলবুল, কামরুল হাসান বাদল, আশেক রসুল চৌধুরী টিপু প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোছলেম উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছিলেন
পরবর্তী নিবন্ধভেজাল ওষুধ উৎপাদন বা মজুদ করলে যাবজ্জীবন