পেপারলেস ট্রেড এখনো স্বপ্ন

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস কাল চট্টগ্রাম কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন কবে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস আগামীকাল। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমসে এখনো চালু যায়নি পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা। ফলে আমদানিরপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে এখনো আমদানিকারকদের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। এতে সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি পণ্য খালাসেও দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন হয়ে গেলে ৯৫ শতাংশ ফাইল প্রথা উঠে যাবে। এক্ষেত্রে অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তারা আরা ফাইল জিম্মি করে উৎকোচ আদায় করতে পারবেন না। তাই অনেক কর্মকর্তারাই চান না, কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা চালু হোক। অটোমেশন বা পেপারলেস ট্রেড হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে সেবাগ্রহীতারা ঘরে বসে অনলাইনে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে শুল্কায়ন কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কাগজপত্র নিয়ে দৌঁড়ঝাপ করার প্রয়োজন পড়ে না।

আমদানিরপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পুরোপুুরি অটোমেশন ব্যবস্থা চালু হবে, এটি সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘদিন ধরে আশ্বস্ত করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক যুগের বেশি সময় পার হলেও সেই আশ্বাস এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। উল্টো অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ধীরগতির কারণে শুল্কায়নের যে কাজ এক মিনিটে হওয়ার কথা, সেখানে ব্যয় হচ্ছে ৫ মিনিট। মাঝে মাঝে সার্ভার আপগ্রেড করে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে অটোমেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সেই সময় নির্দিষ্ট কিছু তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকায় বাংলাদেশচীন মৈত্রী সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির অটোমেশন অ্যাসাইকুডা প্লাস সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়।

পরে সফটওয়্যারের কিছু দুর্বলতা থাকায় ২০১৩ সালে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার চালু করা হয়। পরে ধাপে ধাপে কাস্টমসের সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে পেপারলেস ট্রেড নিয়ে আমাদেরকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেখান থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যোজন যোজন দূরে আছে। যেখানে কাগজ থাকার কথা নয়, সেখানে সবকিছুতে কাস্টমস কর্তারা ডকুমেন্ট নথিভূক্ত করার আদেশ দিচ্ছেন। তারপরেও এই কাগজ নাই, সেই কাগজ নাই বলে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন। এখন আমরা অনলাইনে শুল্ক পরিশোধ করছি। কিন্তু শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার বাকিগুলোতে টেবিলে টেবিলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের আইজিএম (ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্টো) অ্যামেন্ডমেন্টের (সংশোধনী) জন্য কাস্টম হাউসে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা অফিসে বসে বিএলের বিপরীতে আইজিএম দাখিল করতে পারি। কিন্তু সংশোধনীর জন্য কাস্টমস কর্তারা সকল অরিজিনাল কাগজপত্র চায়। আইজিএম সংশোধনী অনলাইনে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে শিপিং অর্ডারটা যদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে করা যায়, তবে ইজিএম আরো সহজভাবে দাখিল করা সম্ভব হবে। আমরা চাই, কাস্টমসের সকল কাজ যেন অটোমেশনে নিয়ে আসা হয়।

আমিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী এবং কাস্টমসের নিয়মিত বিডার ফজলুল আমিন বলেন, কাস্টমসে ইঅকশন (অনলাইন নিলাম) চালু হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। ঘরে বসে দরপত্র জমা দেয়া যাবে এতে ভোগান্তি কমবে এটিই মনে করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, দরপত্র জমা দেয়া বাকি সব আগের মতোই।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে অনেক কিছুই ধাপে ধাপে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সকল ধরনের শুল্কায়নের টাকা এখন অনলাইনে নেয়া হচ্ছে। কাস্টমসে নিলাম অনলাইনে করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরকি বড়ুয়াসহ আট জনের বিচার শুরু
পরবর্তী নিবন্ধজামাতুল আনসারের ৪৫ সদস্য এখনো নিরুদ্দেশ