পৃথিবীর একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী

রাজন বড়ুয়া | বুধবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

.পৃথিবীতে প্রায় ৪,৫০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। তারমধ্যে একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যেটি উড়তে পারে, তা হলো বাদুড়। গোধুলির নীলাভ আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় উড়ন্ত বাদুড়ের দল খাদ্যের সন্ধানে উড়ে চলেছে। চিরোপেট্রা বর্গের বাদুড়ের প্রজাতি রয়েছে প্রায় ১১০০ যাদের শতকরা ৭০ ভাগ পতঙ্গভূক এবং বাকি ৩০ ভাগ ফুলের রস, ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করে। এই শীতের সকালে মাঝে মাঝে খেজুর রসের হাড়িতে বাদুড় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

জানা যায়, বাদুড়ের আদি নিবাস যুক্তরাজ্যে। বাংলাদেশের প্রায় ১১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একচতুর্থাংশ বাদুড়। এখানকার বাদুড় কলাবাদুড় নামে পরিচিত। এদের ডানা প্রায় ১.৫ মিটার, ধড় ৪০ সেমি। দিনের আলোতে এদের সাধারণত দেখা যায় না। বাদুড় নিশাচর প্রাণী। বাদুড়ের পায়ের গঠন পরিপূর্ণ না হওয়ায় এরা পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারে না। ফলে মাটি থেকে উড়ে যেতে পারে না। বাদুড়কে ওড়ার জন্য প্রথমে সামান্য নিচের দিকে নেমে এসে শক্তি নিতে হয়। বিশ্রামের সময় বাদুড় পায়ের নখ দিয়ে গাছের ডালে আঁকড়ে থাকে। পুরনো কুয়া, গাছের খোঁড়ল, গুহা, ফাঁল, পাথরের ফাঁক কিংবা বট, ছাতিম, রেইনট্রি, শিরীষ, নারিকেল গাছ, তাল গাছ, খেজুর গাছ, বাঁশঝাড়সহ নানা জায়গায় এরা আবাস গড়ে তোলে। এরা দলবেধে থাকতে ভালোবাসে। কিছু কিছু বাদুড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে থাকে। এগুলো আকারে তুলনামূলকভাবে বড়।দৃষ্টিশক্তিও মোটামুটি ভালো। আরেক ধরনের বাদুড় আকারে ছোট। এগুলোর দৃষ্টিশক্তি কম। এরা শীত প্রধান অঞ্চলে থাকে। ছোট বাদুড় বেশি শীত সহ্য করতে পারে না। অনেক সময় খাবার গ্রহণ ছাড়াই পুরো শীতকাল কাটিয়ে দেয়।

বছরে একটি মা বাদুড় একটি মাত্র বাচ্চার জন্ম দেয়। বাদুড়ের গড় আয়ু ৩০ বছর। বাদুড় ঘন্টায় গড়ে ৭০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে। এরা ওড়ার সময় অঙিজেন প্রয়োজন হয়। তাই এদের হার্ট মিনিটে প্রায় হাজার বার স্পন্দিত হয়। আবার শীতনিদ্রার সময় এই স্পন্দন মিনিটে মাত্র ২০ বারে নেমে আসে।

বাদুড় একে অন্যের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খায়। খুব সম্ভবত মাত্র ৩ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে যেগুলো রক্ত পান করে। এরা জিহ্‌বার সাহায্যে গবাদিপশুর শরীর থেকে রক্ত পান করে। কিছু প্রজাতির বাদুড় মশা এবং ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে সাবাড় করার ক্ষমতা রাখে। এতে করে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার মরুভূমির মতো এলাকায় পাখির সংখ্যা কম থাকায় বাদুড় পরাগায়নে সহায়তা করে। গাছের পাকা ফল খেয়ে ফলের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটিও করে বাদুড়। চীনজাপানে বাদুড়কে আবার সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।কোনো কারণে বাদুড় কামড়ালে জলাতঙ্করোধী টিকা নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। বাদুড়ের লালা থেকে নাকি ড্রাকুলিন নামক এক ধরনের ওষুধও তৈরি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছুটির দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকাব্য শৈলীর গল্প শোনা