পুরোপুরি গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর

গতকাল আসা দুটি যুক্ত হলে মোট চালু হবে ১৮টি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি আসবে

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের সবগুলো জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বন্দরের চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে (এনসিটি) মোট ১৮টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের সমৃদ্ধ বহর গড়ে উঠেছে। এসব জেটিতে বার্থিং নেয়া একটি কন্টেনার জাহাজে তিনটি করে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন অপারেশন করার সুযোগ তৈরি হওয়ায় বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অনেক বেশি গতিশীল হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৯০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট এসে পৌঁছেছে। প্রকল্পের আওতায় অন্য ইকুইপমেন্টগুলো অচিরে বন্দরের বহরে যুক্ত হবে।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটিতে মোট ৮টি বার্থ রয়েছে। ৮ বার্থের মধ্যে সিসিটির ৩টি বার্থের মধ্যে সিসিটি-১ এবং সিসিটি-৩ বার্থে দুটি জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। জাহাজের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় সিসিটিতে একই সাথে ৩টি জাহাজ বার্থিং দেয়া সম্ভব হয় না। অপরদিকে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ৫টি বার্থ রয়েছে। এর মধ্যে এনসিটি-১ বার্থটিতে মোবাইল হারবার ক্রেন রয়েছে। এই জেটিতে শুধুমাত্র পানগাঁও টার্মিনালের জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এছাড়া এনসিসি-২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর বার্থে কন্টেনার জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। এতে করে সিসিটি ও এনসিটিতে মোট ৬টি জেটিতে এক্সক্লুসিভলি কন্টেনার জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। এই ৬টি জেটির প্রতিটিতে ৩টি করে বিশ্বের সর্বাধুনিক কন্টেনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে করে একটি জাহাজ থেকে একই সাথে তিনটি কন্টেনার ওঠানো বা নামানো যাবে। ফলে কন্টেনার হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া অনেক বেশি গতিশীল হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৫ সালে। দুটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপনের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের ক্রেন ছাড়া শোর টু শিপ কন্টেনার হ্যান্ডলিং শুরু করে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের জেটিতে অবস্থান করে জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাস এবং জাহাজে বোঝাই করতে পারে। এসব ক্রেন দিয়ে জাহাজের ১৫ রো পর্যন্ত কন্টেনার খালাস ও বোঝাই করা হয়।
কী গ্যান্ট্রি ক্রেন একটি বিশ্বমানের বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের অন্যতম প্রধান ইকুইপমেন্ট। এই ক্রেন না থাকলে জাহাজ থেকে কন্টেনার ওঠানো নামানো অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়। যেসব জাহাজের নিজস্ব ক্রেন রয়েছে সেগুলোতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়া কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হলেও যেগুলোর নিজস্ব ক্রেন নেই (গিয়ারলেস) সেইসব জাহাজে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন
ছাড়া কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যায় না। আধুনিক জাহাজ নির্মাতারা জাহাজে কন্টেনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অধিকাংশ জাহাজে ক্রেন স্থাপন করেন না। গিয়ারলেস জাহাজ নির্মাণ করেন। এতে করে বন্দরের কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের একমাত্র ভরসা। চট্টগ্রাম বন্দরে একসময় গিয়ারলেস ভ্যাসেল না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা পাল্টে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহরকে সমৃদ্ধ করতে ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ মোট ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ইতোপূর্বে ২টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বেশ কিছু ইকুইপমেন্ট বন্দরের বহরে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল অপর ২টি গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে। একই সাথে এসেছে ৩টি আরটিজি। পাঁচটি ইকুইপমেন্ট নিয়ে আসা জাহাজটি আজ বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে বার্থিং নিয়ে ইকুইপমেন্ট খালাস করবে। এই ২টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বহরে যুক্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ১৮টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন চালু হবে। এতে সিসিটি ও এনসিটি পুরোপুরি গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় চলে আসবে। আগামী এক মাসের মধ্যে আরো বেশ কয়েকটি ইকুইপমেন্ট বহরে যুক্ত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (যান্ত্রিক) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর পুরোপুরি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের আওতায় চলে এল। এই সক্ষমতা বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ১০৪টি ইকুইপমেন্টের মধ্যে ১৬টি বন্দরে পৌঁছাল। এর অনেকগুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে। কী গ্যান্ট্রি ক্রেনই এই বহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বড় ইকুইপমেন্ট ছিল। তিনি জানান, কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বানানো অবস্থায় থাকে না। অর্ডার দেয়ার পর এগুলো তৈরি করা হয়। একটি ক্রেন বানাতে ৯ মাস সময় লাগে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এগুলো অচিরেই বন্দরের বহরে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করবে। এসব ইকুইপমেন্ট বহরে যুক্ত হলে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অনেক বেশি গতিশীল হবে। তিনি বলেন, কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যে কোনো বন্দরের সক্ষমতার স্বারক। চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড্রোন ক্যামেরা উড়বে সবগুলো পশুর হাটে
পরবর্তী নিবন্ধকুতুবদিয়ায় ফের পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু