পুরুষ লেখকের কলমে নারী-চরিত্র

সাদিয়া শান্তা | শনিবার , ৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

শতাব্দীকাল থেকে পুরুষ-আধিপত্য সাহিত্যজগতে নারীচরিত্র নির্মাণে প্রভাব ফেলে এসেছে পুরুষ মননের জল্পনা কল্পনা। শিল্পী যদি পুরুষ হন, নারী তখন চিত্রিত হয় পুরুষের আকাঙ্ক্ষা রূপে। সাহিত্যিক যদি পুরুষ হন, নারী চরিত্র বর্ণিত হয় পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণে। আর কবি পুরুষ হলে নারীকে ঘিরে কাব্য রচিত হয় পুরুষের কল্পনার রঙে। স্বীয় গোত্রের এই মহত্ত্বের জানান দিতেই হয়তো রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আমি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে তোমারে করেছি রচনা, তুমি আমারই, তুমি আমারই।’
বাংলা সাহিত্যে নারী লেখক বনাম পুরুষ লেখকের কলমে নারী চরিত্র অঙ্কিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। আশাপূর্ণা দেবী, বেগম রোকেয়া কিংবা সেলিনা হোসেন সাহিত্যে নারীকে নির্মাণ করেছেন নিজ নিজ সত্তা ও অন্তরাত্মার আলোকে। আশাপূর্ণা দেবীর ‘সত্যবতী ট্রিলজি’তে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের নারী সত্যবতী, সুবর্ণলতা ও বকুল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে সাহিত্যের এই তিন নারীর প্রতিবাদের ভাষাও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তবে আশাপূর্ণা দেবী তিন নারীর চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ও তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প বর্ণনায় ছিলেন সতর্ক। তিনি পুরুষাধিপত্য সমাজে নারীর হেরে যাওয়াকে যেমন অকপটে তুলে ধরেছেন, তেমনি প্রতিবাদী হতে গিয়ে নারী মনের টানাপোড়নের কথাও বলেছেন। নারী সাহিত্যিকের বর্ণনা কেবল নারী চরিত্রের চতুরতা ও দেহগৌরবেই সীমাবদ্ধ নয়। কিন্তু পুরুষ সাহিত্যিকের থাকে নারী চরিত্র বর্ণনায় রোমান্টিসিজমের প্রবণতা। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্পের নারীদের হওয়া চাই ‘অসম্ভব রূপবতী’। কখনো কখনো রূপের সঙ্গে লেখক জুড়ে করে দেন এক ছটাক বুদ্ধি। কোন কোন গল্পে আবার নারী ‘কৃষ্ণকলি’, তবু মুখাবয়ব কিংবা দেহ গরিমায় থাকা চাই এমন কোন বিশেষত্ব যা নারীকে পাঠকের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলবে। হুমায়ূন আহমেদের রচনায় নারী নিগ্রহের অনেক বাস্তবতা উঠে আসলেও তার সাথে মেশানো থাকে নারীর চতুরতা ও ছলাকলার ছাপ। নারী সাহিত্যিক যেখানে কলমের খোঁচাতে পাঠকের চোখে নারী নিগ্রহের ছবি তুলে ধরেন, পুরুষের কলমে তা প্রত্যক্ষভাবে উঠে আসে না। বরং আবেগের ভেল্কিবাজিতে নারী নিগ্রহের মাঝেও শৈল্পিকতা ফুটে উঠে। কোন কোন সাহিত্যে নায়িকার পরিণতির জন্য স্বয়ং নায়িকাকে এমনকি তার পূর্বজন্মকেও দায়ী করার চেষ্টা চলেছে। মানিক বাবুর ‘দিবারাত্রির কাব্য’তে দুই নারী চরিত্রই পুরুষের খামখেয়ালির কাছে পরাজিত। সুপ্রিয়া ভালোবাসে হেরম্বকে। কিন্তু অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় পারে না হেরম্বের কাছে ছুটে যেতে। হেরম্বও সুপ্রিয়ার সংসার ছেড়ে আসার প্রস্তাবে সায় দেয় না। অন্যদিকে হেরম্ব দ্বিধায় ভোগে আনন্দকে নিয়ে। অল্পবয়সী সেই প্রণয়িনীকে হেরম্ব পারে না পরম প্রেমের আশ্বাস দিতে। যন্ত্রণায় উন্মত্ত নর্তকীর মতো আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আনন্দ। বিদ্রোহী সত্তা নয়, এই ছিল হেরম্বের প্রেমে আনন্দের পরাজিত সত্তা। কিন্তু তবুও হেরম্ব থেকে যায় উপন্যাসের মধ্যমণি হয়ে। তবুও পাঠকের মনে হয় না হেরম্ব এই মৃত্যুর জন্য দায়ী! বঙ্কিমের কপালকুন্ডলা যখন কাপালিকের হাতে নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, তখন কাপালিকের পাশে আঁকা হয় মতি নামের আরেক খলনায়িকার চরিত্র। অথবা আরো জোরালোভাবে আঁকা হয় সংসারে মন না বসা কপালকুন্ডলার চরিত্র। কাপালিক যেন কপালকুন্ডলার নিছক নিয়তি। কপালকুন্ডলার পরিণতির জন্য তার ‘জংলি’ সত্তাই বুঝি দায়ী! কিন্তু শরৎচন্দ্রের দেবদাস যখন রঙিন সুরায় হুশ হারায়, তার জন্য দায়ী দেবদাস নয়, দেবদাসের জমিদার পিতাও নয়। দেবদাসের করুণ পরিণতির জন্য দায়ী থাকে পারুর বিচ্ছেদ; কিংবা চন্দ্রমুখীর প্রণয়। বাংলাসাহিত্যে পুরুষ সাহিত্যিকের রঙে এভাবেই অঙ্কিত হয় একেকটি পরোক্ষ সত্তার নারী। আর প্রত্যক্ষ উপস্থিত থেকে সাহিত্যকে পূর্ণতা দেয় পুরুষ চরিত্রের বিকাশ।
শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, বিশ্বসাহিত্য ঘাটলেও দেখা যায় নারী চরিত্র বিকশিত হচ্ছে পুরুষ আধিপত্যের অধীনে। বিশ্ব সাহিত্যে নারী খুব কমই মধ্যমণি কিংবা কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছে। যদিও বা কখনো কোন লেখক নারীকে মধ্যমণির আসনে বসান, তবে সেই নারীর চরিত্র বিকাশের নামে চলে কেবল নারীর ছলাকলা ও দেহের শ্রী বর্ণনা। ছল-চাতুরি ও দেহ বিবরণেই যেন নারীর চরিত্র অঙ্কন সার্থক হয়ে উঠে। সেসব সাহিত্যে নারী প্রতারিতা, নারী অভিশপ্ত। নারী ছলনাময়ী, নারী আলেয়ার আলো। রুশ ঔপন্যাসিক লেভ তলস্তয়ের উপন্যাস ‘আন্না কারেনিনা’তে দেখা যায় কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে রয়েছেন যে নারী, তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে ‘চরিত্রহীনা’ হিসেবে। তলস্তয়েরই কালজয়ী আরেক উপন্যাস ‘ওয়ার এন্ড পিসে’ শতাধিক চরিত্রের মাঝে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী। তবে নারী সেখানে কোন মুখ্য ভূমিকাই পালন করেনি। কেউবা বলবেন উপন্যাস রচনার সময়কালটাই ছিল তেমন; যুদ্ধ কিংবা শান্তি, সবেতেই নারী ছিল পরোক্ষ। তবে সেই পরোক্ষ নারীও তো উপস্থাপিত হয়েছে প্ররোচক হিসেবে, প্রতারক হিসেবে। নড়বড়ে ব্যক্তিত্বের নাতাশা চরিত্র থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ চরিত্র মারিয়ার মনেও কোন এক পর্যায়ে হিংসার রঙ লাগানো হয়েছে। ইতিহাস আশ্রিত সাহিত্যে পুরুষের কৃতিত্বের পেছনে নারীর অবদান কদাচিৎ দেখানো হয়। কিন্তু নারীকে প্রত্যক্ষ রেখে কয়জন ইতিহাস রচনা করেছেন? নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে কয়জন ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জি ব্যাখ্যা করেছেন? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত হয়েছে শত শত সাহিত্য। সেসব সাহিত্যে মায়ের হাহাকার ফুটে উঠেছে পুত্র হারানোর শোকে, স্ত্রীর যন্ত্রণা দেখানো হয়েছে স্বামীকে না পাওয়ার বিরহে। সেসব সাহিত্যে পুরুষ থাকে ‘সাবজেক্ট’, নারীর অনুভূতি ‘অবজেক্ট’। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নারীর নিজ সংগ্রাম ও নিজ সত্তার বিবরণ তুলে ধরে কজন লিখেছেন রচনা? নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছিলেন ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’। তিনি বীরাঙ্গনাদের গল্পকেই মুখ্য করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন, যা কেবল নারী লেখকার পক্ষেই সম্ভব। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার করুণ পরিণতির পেছনে যেমন ছিল ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা, তেমনি নবাবের শক্তি ও মনোবল হয়েছিল স্ত্রী লুৎফুন্নেসার ভালবাসা। পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে যত সাহিত্য রচিত হয়েছে তার সব কটিতেই স্থান পেয়েছে ঘসেটি বেগমের কুকর্মের কথা। কিন্তু স্থান পায়নি লুৎফার অগাধ প্রেম ও ভালবাসা। শ্রী পারাবত নামে পরিচিত লেখক প্রবীর কুমার গোস্বামী লুৎফুন্নেসাকে পাঠক সমাজে তুলে ধরেছেন একটি বই লিখে। বইটির নাম ‘আমি সিরাজের বেগম’। এই বইয়ে লেখক দেখিয়েছেন নবাবের প্রতি লুৎফুন্নেসার প্রেম ও আনুগত্য। তবে এতেও বারবার মুখ্য হয়ে উঠতে থাকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা; কিংবা সিরাজউদ্দৌলা কেন্দ্রিক লুৎফুন্নেসার ভাবনা। প্রত্যক্ষভাবে ব্যক্ত করা হয়নি নারী লুৎফুন্নেসার মনস্তত্ত্ব। মনে প্রশ্ন জাগে, লেখক স্বয়ং যেখানে পুরুষ, সেখানে নারীর বাহ্যিক গঠনের রসালো বর্ণনা করা সম্ভব হলেও নারীর মনস্তত্ত্ব চিত্রিত করা কি লেখকের পক্ষে আদৌ সম্ভব?
নারীর মনের ‘মনগড়া’ ব্যাখ্যা দিতে পিছিয়ে নেয় পুরাণ আশ্রিত লেখকগণও। বাল্মীকি, বেদব্যাস থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর নারী অধিকার সচেতন নব্য লেখকগণও তাদের মনের মতো সাজিয়ে নিয়েছেন পুরাণের বিভিন্ন নারী চরিত্র। রোমান্টিকতার ধারাবাহিকতায় কখনো বা ‘পরাজিত’ নারীকে উপস্থাপন করেছেন ‘প্রতিবাদী’ হিসেবে; ‘মানিয়ে নেওয়া’ নারীকে ভূষিত করেছেন ‘ধীর স্থির’ উপাধিতে। কিন্তু উচ্চবাচ্য করেননি পুরাণেও নারী চরিত্রকে নিগ্রহ করা নিয়ে। বিনাদোষে বনবাসে নির্বাসিত হয়ে সীতা যখন জীবনযুদ্ধে লড়াই করে বছরের পর বছর, তখনও ‘শুচিতা’ যাচাইয়ে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলা হয়। অপমানে, অভিমানে জর্জরিত সীতা ধরণীতলে প্রবেশ করে। বাল্মীকির এই ‘হেরে যাওয়া’ সীতাকে কেউ কেউ এই যুগে নারীর ‘ধৈর্যের’ প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। কেউ বা আবার অপমানিতা সীতার ভূতলে প্রবেশ করাকে আত্মমর্যাদা রক্ষার নাম দিয়ে রোমান্টিসাইজ করেন। মূলত নারীর প্রতিবাদী সত্তাকে চাপা দিতে সীতাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় নতুন নতুন সব ব্যাখ্যা ও ধ্যান-ধারণা। কখনো তার নাম দেয় ‘ধৈর্য্য’, কখনো ‘অভিমান’, কখনোবা ‘আত্মমর্যাদা’। বলা হয় না কেবল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে সীতাদের পরাজিত হওয়ার কথা। একইভাবে পুরুষাধিপত্য সাহিত্যজগতে বলি হয়েছে মহাভারতের দ্রৌপদী। মহাভারতে বেদব্যাস সৃষ্ট দ্রৌপদীর প্রভাব ও উপস্থিতি ছিল সীমিত। পঞ্চপান্ডবের সাথে দ্রৌপদীর ভাগ্য আষ্টেপৃষ্টে জুড়ে দিলেও বেদব্যাস আঁকেননি দ্রৌপদীর মন, উন্মুক্ত করেননি দ্রৌপদীর সত্তা। একবিংশ শতকে এসে যখন দ্রৌপদী নজর কাড়ে নারীবাদজ্ঞাত আধুনিক কোন লেখকের, তখনো কি দ্রৌপদী মুক্ত হয় পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার বেড়াজাল ছিড়ে? লেখক মাহমুদুর রহমান ‘দ্রৌপদী’ লিখেছেন দ্রৌপদীর স্বীয় সত্তাকে ব্যক্ত করার প্রচেষ্টা থেকে। মহাভারতের সাতকাহন বর্ণনা করেছেন দ্রৌপদীর দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু লেখক বুঝিবা ভুলে যান তিনি স্বয়ং পুরুষ হয়ে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করে দ্রৌপদীদের ভাবনা জলের বুনন আয়ত্ত করা সহজকাম্য নয়। দ্রৌপদীকে কেন্দ্রীয় চরিত্রের মর্যাদা দিয়ে লেখক মহাভারতের ‘প্যাসিভ’ নারী চরিত্রকে সফলভাবেই ‘এক্টিভ’ করে তুলেছেন তার বইয়ে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন সমাজে গেথে থাকা পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার ফাঁদ থেকে দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে। ফলে মাহমুদুর রহমানের দ্রৌপদীও কখনো হয়েছেন ছলনাময়ী, কখনো হয়েছেন কপট নারী। স্বীয় অপমানের জবাব দিতে যখন পান্ডবদের মনোযোগ আকর্ষণের দরকার পড়ে, তখন ছলনাময়ী নারীর মতো পান্ডবদের শয্যায় গিয়ে তাদের উত্তেজিত করে তুলেছে মাহমুদুর রহমানের দ্রৌপদী। অজ্ঞাতবাসকালে লম্পট কীচক কর্তৃক অপমানিতা দ্রৌপদী প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চায়। সেই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করতে দ্রৌপদী উপস্থিত হয় ভীমের দ্বারে। বহুদিন পর স্বামীসঙ্গ পেয়ে জৈবিক চাহিদার ডাকে সক্রিয় হয়ে সাড়া দেয় দ্রৌপদী। কিন্তু এই নিষ্পাপ চাওয়াকেও ছলনার নাম দিয়ে নারীর জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকৃতি জানানো হয়। লেখক বুঝিবা ভুলে যান নারীরও থাকে কাম। নারী কেবল উদ্দেশ্য হাসিল করতে যৌনতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে না, প্রণায়াসিক্ত নারী জৈবিক চাহিদার প্রয়োজনে যৌন আবেদন জানান। এভাবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ছলনাময়ীর উপাধি থেকে মুক্তি পায়না দ্রৌপদীরা। বারবার পতিত হয় ‘পুরুষের মগজে আঁকা নারী চরিত্র’ বিন্যাসের জালে।
পুরুষ লেখকের পক্ষে তবে নারীর চিন্তা জগতে প্রবেশ করা কেন এতো দুষ্কর? দুষ্কর, কারণ যুগ যুগ ধরে নারী অবরোধবাসিনী। পুরুষ করে নি নারীকে বন্ধু, জানতে চায়নি নারীর গহীন মনের কথা। নিজেকে ব্যক্ত করার সুযোগ নারী পায়নি, তাই সাহিত্যে নারীর চরিত্র বিকাশে পুরুষ সাহিত্যিকের চেয়ে নারী সাহিত্যিক বরাবর সফল হয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই বেগম রোকেয়ার প্রতি, ‘সুলতানার স্বপ্ন’ লিখে যিনি অবরোধবাসিনীদের মনে মুক্ত হওয়ার সাধ জাগিয়েছেন। কেউ কেউ একে বলেন নারীবাদীদের ইউটোপিয়া। ‘সুলতানার স্বপ্নে’ বেগম রোকেয়া দেখিয়েছেন- কেমন হতো যদি রাজ্যভর্তি কেবল নারীই থাকতো! পুরুষের ‘বাহুর জোর’ ছাড়া নারী যে চলতে সক্ষম তার এক ঝলক রূপ তিনি দেখিয়েছেন এই বইয়ে। শতবছর পূর্বে যে নারী লেখক সুলাতানাদের মনে এমন স্বপ্ন এঁকে দিতে পেরেছিলেন, আজ শতবছর পরও ‘আলোকিত’ পুরুষেরা সেই স্বপ্নের আলোকে সাহিত্যে নারী চরিত্র নির্মাণ করতে পারেন না। এই ব্যর্থতা নারীর নয়, এই ব্যর্থতা পুরুষ লেখকেরও নয়। এই ব্যর্থতার দায় সমাজের, আমাদের সকলের। ব্যর্থতার দায় সমাজের পুরুষতান্ত্রিক নিয়মের, নারী-পুরুষ বৈষম্য স্বাভাবিককরণের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমারের নববর্ষের পানি খেলায় স্বাগতম- এপ্রিল ২০১৭
পরবর্তী নিবন্ধদুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ