পুরনো ভবন ভাঙার সময় ধস, প্রাণ গেল দুজনের

হতভাগ্যরা ঠিকাদার-সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে সড়কের পাশের একটি ভবন ভাঙার সময় কিছু অংশ ধসে পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জামালখান এলাকার দাওয়াত রেস্টুরেন্টের পাশের পুরাতন দুতলা একটি ভবন ভাঙার সময় এ ঘটনা ঘটে। এতে চাপা পড়ে রওনক চক্রবর্তী (৬০) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪১) নামের দুজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রওনক চক্রবর্তী চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুজনই ভবনটি ভাঙার কাজে ঠিকাদারসাব ঠিকাদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, ভবন ধসের ঘটনায় দেয়াল চাপা পড়ে সাবঠিকাদার মো. জসিম ঘটনাস্থলে মারা যান। অন্যদিকে ঠিকাদার রওনক চক্রবর্তীকে গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। সেখানে রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। জসিম উদ্দিন ভোলা জেলার লালমোহন এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র। নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন সিএন্ডবি রাস্তার মাথা এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। অন্যদিকে রওনক চক্রবর্তী নগরীর জামালখানের আর আর প্যাকেজেস এলাকায় বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার মৌলভীর দোকান এলাকায়। পিতার নাম দুলাল চক্রবর্তী।

এদিকে ভবন ধসের ফলে ধসে পড়া অংশ রাস্তায় গিয়ে পড়ে। পরে তা রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। স্থানীয় লোকজন বলেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই ভবনটি ভাঙার কাজ চলছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারো নজরে পড়েনি। নজরে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটতো না। হতো না এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুও।

এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থলে হাজির হন নিহত সাবঠিকাদার মো. জসিম উদ্দিনের বড় ভাই মো. মহসিন। তিনি কর্ণফুলীর ক্রসিং এলাকায় বসবাস করেন। কিভাবে কী হলো তা জানতে চেয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুই ছেলের কী হবে তা জানতে চাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ফুফাতো ভাই মো. নয়ন। তিনি বলেন, ভিকটিম জসিম উদ্দিন ঠিকাদারির কাজ করতেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ পেশায় যুক্ত। দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন শুনে আমরা ছুটে আসি। পরে জানতে পারি তার মৃত্যু হয়েছে। বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিও।

ঘটনাস্থলে কথা হয় কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবিরের সঙ্গে। তিনি আজাদীকে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি এবং ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করি। ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রতিষ্ঠানটির টিমও দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয় এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। ঘটনাস্থলে একজন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপর একজন মৃত্যু করেছেন। দুজনই পুরাতন ভবনটি ভাঙার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেখানে কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। ওসি বলেন, দুর্ঘটনায় ধসে পড়া অংশগুলো রাস্তায় চলে এসছিল। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা সরিয়ে নিলে ঘণ্টাদেড়েক পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার ব্যাপারে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে ওসি জাহেদুল কবির বলেন, নিহত দুজন কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত ব্যক্তি। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে সুরতহাল শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, যে ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে সেটির মালিক রতন ভট্টাচার্য নামের একজন। ১০১২ বছর আগে তিনি ভবনটি অপর একজনের কাছ থেকে কিনেন। তবে ভবনটি প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। পণ্যের গুদাম হিসেবে রতন ভবনটি ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ নেন এবং কাজ শুরু করেন। প্রথমে পেছনের অংশ এবং পরে সামনের অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন। সামনের অংশ ভাঙার সময়ই ঘটে এ দুর্ঘটনা।

স্থানীয় জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখি চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপর একজনও গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা গেছেন শুনেছি।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপপরিচালক আব্দুল হালিম আজাদীকে বলেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই ভবনটি ভাঙার কাজ করছিল শ্রমিকরা। ভবনের পাশেই ফুটপাত ও রাস্তা। স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আশপাশের মানুষ এ পথে চলাফেরা করেন। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই ভবনটি ভাঙছিলেন। ভবন মালিকের গাফিলতি ছিল তা স্পষ্ট। আমরা তদন্ত করছি। তিনি বলেন, ধসে পড়া অংশ ফুটপাত হয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। আমরা সেগুলো সরিয়ে নিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোছলেম উদ্দিনের আসনে উপনির্বাচন ২৭ এপ্রিল
পরবর্তী নিবন্ধশ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ