পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং জরুরি

| সোমবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়ে যায় সব। আমরা নানা সময়ে প্রত্যক্ষ করেছি, সকালে উচ্ছেদ তো বিকেলে ফের দখল। গত ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল/ নগরীর সড়ক ফুটপাত’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘নগরের টাইগারপাস মোড় থেকে নেভি কনভেনশন হলের পাশ দিয়ে যাওয়া দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত সড়কটি বহু পুরনো। দেওয়ানহাট ব্রিজ হওয়ার পর এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সাধারণ পথচারীরা নিয়মিত ব্যবহার করেন এ সড়কটি। দুদিকে রেলবিট পর্যন্ত রিকশাও চলে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির দুই পাশে অন্তত ৫০টি দোকান গড়ে উঠে অবৈধভাবে, যার ৩০ থেকে ৩৫টি স্থায়ী। বাকিগুলো ভাসমান। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সড়কে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ সময় উচ্ছেদ করা হয় ১৫ থেকে ২০টি দোকান। বাকি দোকানদাররা নিজ উদ্যোগে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে অভিযানের পর প্রায় দুদিন পার হলেও নিজ উদ্যোগে কেউ সরে যায়নি। উল্টো যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা ফিরে আসছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদকৃতরা ত্রিপল দিয়ে আবারও দোকানের কাঠামো তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেছে। উচ্ছেদ করা একটি হোটেলও একইভাবে ত্রিপল টাঙিয়ে চালু করা হয়েছে। অবশ্য বৃহস্পতিবার বিকেলেও উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় ভাসমান দোকান দেখা গেছে। শুধু টাইগারপাস-দেওয়ানহাটের পুরনো সড়কটি নয়; গত একমাস ধরে প্রায় প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাতে অভিযান চালিয়েছে চসিক। উচ্ছেদ করা হয় কয়েকশ স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান ও অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু যার বেশিরভাগই আবারো দখল হয়ে গেছে। চকবাজারসহ কয়েক জায়গায় এমনও হয়েছে, সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলেই বসে গেছে দোকানপাট। এ যেন চসিকের সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের ‘চোর-পুলিশ’ খেলা।’ প্রতিবেদনটিতে নগরবাসীর মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা বলছেন, শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না। পুনরুদ্ধার হওয়া ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে মিনি বাগান করে দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে উচ্ছেদের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা জায়গা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় উচ্ছেদ করেও কাজ হবে না। কেউ কেউ ফুটপাতের পরিবর্তে বিকল্প স্থানে হকারদের বসার জায়গা করে দেয়ার পরামর্শ দেন।
আসলে সাধারণত ব্যস্ত সড়কের পাশে ফুটপাত তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে, ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে; সেজন্য ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এর পাশে দোকানপাট নির্মাণ বা ফুটপাতের ওপর দোকানের বর্ধিত অংশ চলে যাওয়া বা হকারদের বসতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি! দেখি এর বিপরীত চিত্র। ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর মালামালেই দখলে থাকে ফুটপাতের অর্ধেক জায়গা। ফলে ফুটপাতে চলাচল করতে পথচারীদের অসুবিধা হয়। অনেক সময় ফুটপাতের এ অবস্থার জন্য পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে নারীদের চলাচলে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়। এসব দোকানে জনসাধারণের ভিড়ের কারণে নারী পথচারীদের চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রধান সড়কে হাঁটতে হয়। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।
ইতোপূর্বে সম্পাদকীয়তে আমরা লিখেছিলাম, ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করে। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্ছেদ হওয়া জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাকিং ফোর্স’ নামে বিশেষ দল গঠন করে চসিক। গত ১৭ আগস্ট থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দলটি। কথা ছিল ২১ সদস্যের দলটি উচ্ছেদকৃত জায়গা আবারো দখল হয়েছে কী না তা মনিটরিং করবে। কোথাও দখল হতে দেখলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করবে এবং আবারো উচ্ছেদ করবে। কিন্তু যাত্রা শুরু পর থেকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর এমন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বরং চসিক নিয়মিত যে অভিযান চালায় সেখানেই অংশ নিচ্ছে তারা। ফলে এ স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠনেরও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। বলা বাহুল্য, ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করাও হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই অবৈধ শক্তির ছত্রছায়ায় সেই ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়। এ বিষয়ে নিয়মিত মনিটারিং জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে