পিকআপচালক সাইফুলের আমৃত্যু কারাদণ্ড

চকরিয়া প্রতিনিধি

চকরিয়ায় ৬ ভাই নিহতের ঘটনা ।। গাড়ির মালিক ও সহকারীর বিরুদ্ধে ভিন্ন ধারার মামলা আদালতে চলমান | সোমবার , ১২ জুন, ২০২৩ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে (চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে) পণ্যবোঝাই পিকআপচাপায় একই পরিবারের ছয় ভাই নিহতের ঘটনায় চালক সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুলকে (২২) আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয় রায়ে। গতকাল রবিবার দুপুরে আদালতে এই রায় ঘোষণার সময় আসামি পিকআপচালক সাইফুল সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সড়ক পরিবহন তথা মোটর যান আইনের ২১৮ ধারা এবং পরিকল্পিত হত্যার দায়ে ৩০২ ধারায় আদালতের বিচারক এই রায়ে আসামি চালককে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার জেলার ৪০ বছরের ইতিহাসে কোন সড়ক দুর্ঘটনায় এই প্রথম কোন আসামিকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স ২৫ বছরের নিচে হওয়ায় আসামি মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেছেন। এর পরও আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেওয়ার বিষয়টি ঐতিহাসিক রায় হয়ে থাকবে।

আদালত সূত্র জানায়মামলাটির বিচারকার্য অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়। মামলা রুজুর পর প্রথমে হাইওয়ে পুলিশ ও পরে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারে। দ্রুততার সাথে এই মামলার তদন্ত শেষ করে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কক্সবাজার কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মো. এনামুল হক চৌধুরী।

তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে ছয় ভাইকে পিকআপ ভ্যানের চালক ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয়বার চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। চালক গাড়িটি পেছনে এনে আহত ব্যক্তিদের দ্বিতীয়বার চাপা না দিলে এত প্রাণহানি ঘটত না। পিকআপ ভ্যানের চালক সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সাইফুল, মালিক মাহামুদুল করিম ও তার ছেলে মো. তারেককে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। তন্মধ্যে চালক সাহিদুল কারাগারে, মালিক মাহামুদুল করিম জামিনে এবং পলাতক রয়েছে মালিকের ছেলে ও পিকআপের সহকারি মো. তারেক। তদন্ত প্রতিবেদনে এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

অন্য দুই আসামি পিকআপ মালিক মাহমুদুল করিম ও তার ছেলে হেলপার মো. তারেকের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, ‘পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে এই দুই আসামির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলেননি। তবে দুই আসামির বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা নিম্ন আদালতে চলমান রয়েছে। তা হলো পিকআপটির ফিটনেস এবং লাইসেন্স না থাকার পরেও সেই পিকআপ রাস্তায় নামানোর অভিযোগে।

চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত পুলিশের কর্মকর্তা (সিএসআই) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, তদন্ত সংস্থা কর্তৃক আলোচিত এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর। এটি আদালতে গৃহীত হয় ওই বছরের ২৩ নভেম্বর। এর পর চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি শেষে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন নিহত ছয় পুত্রের মা মৃণালিনী সুশীল। তিনি এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রবিবার বিকেলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার বুক খালি করে একে একে ছয় পুত্রকে কেড়ে নেওয়া হলো। সেই মামলার রায়ে চালককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু গাড়ির মধ্যে যে মালিক ও তার ছেলে ছিল তারা কেন বাদ গেলো? এই জবাব আমি কার কাছে গেলে পাবো?

চালক সাহিদুল বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাপের গাড়ার মো. আলী জাফরের ছেলে। আর পিকআপটির মালিক মাহমুদুল করিম বাদল চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সাহেবখাঁন পাড়ার শামসুল আলমের ছেলে। সহকারি তারেক পিকআপ মালিকের ছেলে।

উল্লেখ্য২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পণ্যবাহী মিনি পিকআপের চাপায় নিকটস্থ হাসিনাপাড়ার সুরেশ চন্দ্র সুশীলের ৬ ছেলে নিহত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার ৭ কোটি টাকার সিটি স্ক্যান মেশিনও অচল
পরবর্তী নিবন্ধচবির ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে সিগারেট, তদন্তে কমিটি