সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি সহজে মানুষের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নগরে শুরু হয়েছে ছয়দিনব্যাপী ‘পিএইচপি মোটর ফেস্ট-২০২১’। ‘আমাদের রাস্তায় আমাদের গাড়ি’ স্লোগান নিয়ে পিএইচপি অটোমোবাইলস্ আয়োজিত এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশের প্রথম ‘টকিং কার’ তথা ‘প্রোটন এক্স-৭০ এসইউভি গাড়ি’। এছাড়া মেলায় ব্র্যান্ড নিউ ২০২১ মডেলের প্রোটন সাগা, প্রোটন পারসোনা প্রদর্শন করা হচ্ছে। মেলা থেকে কেউ গাড়ি কিনলে পাচ্ছেন রেজিস্ট্রেশনের উপর পঞ্চাশ ভাগ ছাড়।
গতকাল দুপুরে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় (পিএইচপি হাউজ) মেলার উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শিল্পপতি সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিএইচপি অটোমোবাইলস্-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ। বক্তব্য রাখেন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন। দেশে গাড়ি প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে পিএইচপি পরিবার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছে মন্তব্য করে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমাদের আত্মসম্মান সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পুরনো গাড়ি এনে, জাপানিরা ব্যবহারের পর যে গাড়ি স্ক্র্যাপ করার কথা সেই গাড়ি এনে আমরা ব্যবহার করব, সেটা আত্মসম্মানবোধে লাগবে। সে আত্মসম্মানবোধ উন্নত করার জন্য পিএইচপি পরিবার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের তৈরি গাড়ি ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেজন্য বেসরকারি খাতে সাহস নিয়ে পিএইচপি পরিবার এগিয়ে এসেছে গাড়ি প্রস্তুত করার জন্য। আর্থিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাব, দেশে প্রস্তুতকৃত গাড়ি কিনে দেশের অগ্রযাত্রায় শামিল হোন।
নওফেল বলেন, সরকারিভাবে সবসময় নতুন গাড়ি কেনা হয়। সরকারিভাবে গাড়ি কেনার মার্কেটটা এক ধরনের মনোপলি (একচেটিয়া) করে রাখা হয়েছিল। এটা থেকে আমরা মুক্তি চাই। বাংলাদেশে কোনো মনোপলি আমরা রাখব না। যারা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আছেন তাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, একক কোনো সাপ্লাইয়ার, মনোপলি রাখা যাবে না। দেশে একক নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবসা থাকবে না। মানুষের জন্য ও প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রতিযোগিতা করে দাম কমবে এবং মানুষ সেবা পাবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আরো পলিসি চাই, যেখানে পুরনো গাড়ির যে সিন্ডিকেট এবং সরকারি নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে যে মনোপলাইজডভাবে দেয়া হয়, সেটা যেন ভেঙে যায়। একটা কোম্পানি আছে যারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে, নতুন গাড়ি কেবল তারাই দিচ্ছে। এটা হতে দেয়া যাবে না।
নওফেল বলেন, দেশের বিভিন্ন সেক্টর যদি উন্নত না হয়, যেমন মিডিয়া, ট্রান্সপোর্ট, অটোমোবাইল সেক্টর উন্নত না হলে মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবে না। দেশের মানুষের যদি কর্মসংস্থান না হয় তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে না। এতে ডমেস্টিক ইন্ডাস্ট্রি হবে না। আমাদের ডমেস্টিক কনজাংশন বাড়াতেই হবে। আমদানি নির্ভর হয়ে আমরা আজীবন থাকতে পারব না। করোনায় আমরা দেখেছি আমদানি নির্ভর হলে ঝুঁকি তৈরি হয়।
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের বন্যা শুরু হয়ে গেছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বিশ্বব্যাংক দুরভিসন্ধি করে টাকা না দিলেও পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান হয়েছে। একসময় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না, বিদ্যুতের অভাবে ৪০ ভাগ মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকত। বর্তমানে এক মিনিটও বন্ধ থাকে না। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সবজি এবং চতুর্থ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে একসময় দুর্ভিক্ষ ছিল সেখানে আজ খাদ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। এসব উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশে গাড়ি তৈরি হচ্ছে। পিএইচপি পরিবার দিন-রাত পরিশ্রম করছে এজন্য। আমরা দেশের গর্ব গাড়ি তৈরি করছি। আমাদের রাস্তায় আজ আমাদের তৈরিকৃত গাড়ি চলছে। ইনশাল্লাহ, সবাই যদি এগিয়ে আসে আমাদের গাড়ি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে থাকবে।
কঠোর পরিশ্রম ও সৎ মনোভাব থাকায় পিএইচপি ফ্যামিলি দেশ সেরা শিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জীবনে সাফল্য পেতে হলে সৎ মনোভাব নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ঘণ্টা-মিনিট হিসেব করলে হবে না। প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। কাজের প্রতি যে মানুষ যত সময় দিয়েছে সে তত বড় হয়েছে।
সুফি মিজান বলেন, পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটির ক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোইজ করে না। আমরা কাজ করি দেশকে সামনে রেখে। আমরা পরিবেশ নষ্ট করি না। আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করে, সুইপার থেকে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত সকলকে সন্তানতুল্য মনে করি। সেজন্য পিএইচপি কোনো গ্রুপ না, এটা পিএইচপি ফ্যামিলি।
তিনি বলেন, পিএইচপি ফ্যামিলি কেবল টাকার পাহাড় গড়ার জন্য আয় করে না। আমরা মানুষের জন্য খরচ করতে আয় করি। সরকার তিন শতাংশের কথা বললেও আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ৩৩ শতাংশ ছেলে-মেয়েকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক পড়ালেখার সুযোগ দিচ্ছি।
মাহবুবুল আলম বলেন, পিএইচপি পরিবার দেশে শিল্পের বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখছে। এজন্য তাদের প্রশংসা করতে হয়।
মেলায় উপস্থিত ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির হেড অব সেলস্ মো. আরিফ উল্লাহ ও পিএইচপি স্টঙ অ্যান্ড সিকিউরিটিজের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। সঞ্চালনা করেন পিএইচপি ফ্যামিলির সিনিয়র এঙিকিউটিভ মো. মিফতাহুল ইসলাম।
এদিকে ফেস্টের প্রথম দিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন। তারা প্রদর্শনীর জন্য রাখা গাড়ি দেখে সস্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মেলা আয়োজন নিয়ে পিএইচপি অটোমোবাইলস্-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আকতার পারভেজ আজাদীকে বলেন, মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের হাতের নাগালে ভালো কোয়ালিটির গাড়ি রিজনেবল প্রাইজে পৌঁছে দেয়া। যেটা এসেম্বলড ইন বাংলাদেশ। আমরা প্রথমে এসেম্বলড দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন নিজেরা রং করছি এবং ২৬টা স্পেয়ার পার্টস বাংলাদেশে তৈরি করি। এতে করে আমাদের গাড়ির প্রাইজ অনেক রিজনেবল। এছাড়া পাঁচ বছর ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। মেলায় যদি কেউ গাড়ি কিনে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রশনের ওপর ফিফটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিচ্ছি।
তিনি বলেন, বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে পারফেক্ট ভেহিক্যাল সলুশন (পিভিএস) নামে একটি অনলাইন অ্যাপসের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রোটন ব্যান্ডের যে কোনো মডেলের গাড়ি ব্যবহারকারী এই অ্যাপস ডাউনলোড করে ঘরে বসেই অনলাইনে নিজের প্রয়োজনীয় স্পেয়ার পার্টস অর্ডার দিতে পারবেন। আমাদের পিভিএস টিমের সহায়তায় স্পেয়ার পার্টস সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সেবা স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রহণ করতে পারে।