পাল্টে গেছে কর্ণফুলী পাড়ের চিত্র

রাঙ্গুনিয়ায় ভাঙন রোধে ব্লক

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৬ মার্চ, ২০২২ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর বর্ষা এলেই রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী নদী পাড়ের মানুষের মাঝে দেখা যেত দুশ্চিন্তা। ভাঙনের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হতো মানুষের ভিঠেমাটি। তবে ব্লক স্থাপনে পাল্টে গেছে নদী পাড়ের চিত্র এবং মানুষের জীবন-জীবিকা। নদীর পাড় হয়ে উঠেছে পর্যটন স্পটে। এতে বেড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন-মান। জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধমনী কর্ণফুলী দুই তীরেই ভাঙন প্রবণ ছিল। দেশের প্রথম জলবিদুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্মিত কাপ্তাই বাঁধ সৃষ্টির পর থেকেই কর্ণফুলীতে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। কাপ্তাই বাঁধের নিচে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হতো রাঙ্গুনিয়া। বিশেষ করে উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, সরফভাটা, শিলক, কোদালা, বেতাগী ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় দুই তীর থেকেই ভাঙতো কর্ণফুলী নদী। বর্ষা এলেই ভাঙন আতঙ্ক বুকে দিন কাটাতো নদী পাড়ের মানুষ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই উপজেলার কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার শুধু কর্ণফুলী নদীর ভাঙনের কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে। তবে নদী পাড়ের এই চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে ২০০৮ সালে ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর। তাঁর নির্বাচনী এলাকার অংশে কর্ণফুলী নদী ও ইছামতি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ২০০৮ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক বসানো হয়েছে। এরপর কর্ণফুলীর দুই তীরে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ অংশে ভাঙন রোধ এবং রাঙ্গুনিয়ার আরেক খরস্রোতা নদী ইছামতির ভাঙনের কবল থেকে নদী তীরবর্তী মানুষকে রক্ষা করতে এখন পর্যন্ত আরও ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। ফলে কর্ণফুলী ও ইছামতী নদীর দীর্ঘদিনের ভাঙনের চিরাচরিত চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে এসব নদীর শাখা-প্রশাখার ভাঙন ঠেকাতে আরও ৭৫ হাজার ব্লক বসানো হচ্ছে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপনের পর পাল্টে গেছে নদী পাড়ের সার্বিক চিত্র। উপজেলার চন্দ্রঘোনা, বেতাগী, সরফভাটা, পোমরা, পৌরসভা, মরিয়মনগর, কোদালা ইউনিয়নসহ রাঙ্গুনিয়ার সংসদীয় এলাকা বোয়ালখালী উপজেলার আংশিক এলাকায় ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপন হয়েছে। এছাড়া ইছামতী নদীর দুই পাড়েও ডাম্পিং ও সিসি ব্লক স্থাপন করা হয় এবং এই নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন খালে বর্তমানেও ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেসব এলাকায় ব্লক স্থাপন হয়েছে সেখানে স্বচ্ছ জলরাশির সাথে নদীপাড়ের গভীর সখ্যতা এখন চোখে পড়ার মতো। ব্লক স্থাপনের আওতায় আসা প্রতিটি এলাকা রূপ নিয়েছে একেকটি পর্যটন এলাকা হিসেবে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্লকের ওপর বসে বিভিন্ন দূর-দূরান্তের মানুষ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ায় নদীপাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। যেখানে মানুষের ভিটেমাটি হারানোর হাহাকার ছিল প্রতিনিয়ত, সেই নদীর পাড় এখন মানুষের অবকাশ যাপনের উত্তম স্থানে পরিণত হয়েছে। এতে পাল্টে গেছে নদীপাড়ের মানুষের ভাগ্য।
মরিয়মনগর গ্রামের মো. নুরুল আলম বলেন, এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলতেই দেখা মেলে নদী পাড়ে সাধারণ মানুষের সময় কাটানোর চিত্র। যেই নদীর পাড়ে একসময় ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ দিন কাটাতেন, সেখানে এখন মানুষ নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে উন্নয়নে রাঙ্গুনিয়ার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরিকা শিল্প এলাকায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
পরবর্তী নিবন্ধ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ