পার্বত্য এলাকায় অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনতে হবে

| সোমবার , ৫ জুলাই, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় পাহাড়ের কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ের উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আর তাই সংশ্লিষ্টদের আধুনিক কৃষি তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান, দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে, পাহাড়ের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে অপ্রচলিত ফসল চাষের সম্ভাবনা অনেক। আনারস, আম, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল চাষের সম্ভাবনাও প্রচুর। কাজুবাদাম ও কফির উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। একই সঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, বর্তমানে দেশে অল্প পরিসরে কাজুবাদাম এবং কফি উৎপাদন হচ্ছে। শুধু পাহাড়ি অঞ্চল নয়, সারাদেশের যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু বর্তমানে চাষাবাদ হচ্ছে না পর্যায়ক্রমে এমন এলাকাও কাজুবাদাম এবং কফি চাষের আওতায় আনা হবে।
গত ৩ জুলাই ‘কৃষি অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে পাহাড়ে’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, পাহাড়-অরণ্য উপত্যকার জনপদ খাগড়াছড়ি। চেঙ্গী ও মাইনী অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই জনপদে কৃষি অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। সমতল ভূমির পাশাপাশি মাঝারি উচ্চতার পাহাড়ে চাষাবাদে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন। খাগড়াছড়ি কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ বলছে, প্রায় ৭৫ হাজার পরিবার কৃষির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কৃষি অর্থনীতিতে বছরের লেনদেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বিশেষ করে আম, লিচু, হলুদসহ মসলা জাতীয় ফসল ও ধান উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতে প্রতিবছর খাস অনাবাদী জমি কৃষি চাষের আওতায় আসছে। বিশেষত যেসব পাহাড় বছরের পর বছর অনাবাদী থাকত তা এখন আবাদের আওতায় আসছে। পাহাড়ি অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে না উঠায় কৃষির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। দুর্গম অঞ্চলের মানুষও এখন পরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক কৃষি প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। ফলে কৃষিতেই মানুষের সমক্ষতা আসছে।
ড. মো. জামাল উদ্দিন তাঁর এক লেখায় বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কৃষি বৈচিত্র্যময় একটি এলাকা, যা দেশের এক-দশমাংশ এলাকাজুড়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত। কৃষির উন্নয়নের দিক থেকে এ অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানকার জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিও জোরালো হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে এর গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে, পাহাড়ি অঞ্চলেও সেটার বাস্তবায়ন জরুরি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছতে কৃষির উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার ওপর বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের তাগিদ রয়েছে। কৃষিকে লাভজনক ও রফতানিমুখী বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করাও বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য’। তাঁর দৃষ্টিতে পাহাড়ি কৃষির প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হলো কৃষি পেশাকে লাভজনক পেশায় পরিণত করা। এর জন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টর দায়ী যেমন-ফসলের উৎপাদনশীলতা কম, শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সংকটে সেচের অভাব, জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের রোগ ও পোকার আক্রমণ, অতি বৃষ্টি এবং অতি উষ্ণতা, মাটির উর্বরা শক্তি কম, মাটি ক্ষয় হওয়া, ভূমিধস, জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্মত কৃষি উপকরণ সহজলভ্য না হওয়া, উপকরণ ব্যবহারে দক্ষতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা, পণ্য সংগ্রহোত্তর জ্ঞানের স্বল্পতা, পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়া, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে স্বল্পতা, উত্তম কৃষিচর্চার অনুপস্থিতি, প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ না পাওয়া, কালেকশন সেন্টার ও সংরক্ষণাগার না থাকা।
অতি সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কাজুবাদাম, কফি, গোলমরিচসহ অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল চাষ করতে হবে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এসবের বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও বেশি। এজন্য পাহাড় সবচেয়ে সেরা জায়গা। এটা পাহাড়ের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির সর্বত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। সে লক্ষে মাঠ পর্যায়ের সমপ্রসারণকর্মীদের আধুনিক কৃষির তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা আবশ্যক, যা কার্যকর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়। পার্বত্য এলাকায় এখনও অনেক অনাবাদি পতিত জমি রয়েছে। এসব জমিকে চাষের আওতায় আনতে গেলে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের উপকরণ সহায়তার পাশাপাশি কৃষির আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে