পানিতে পড়ে নয়, আরিয়ানকে শ্বাসরোধে হত্যা

১৪ মাসেও কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

হালিশহরে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সন্তান মেহেরাজ ইসলাম আরিয়ান (৬) অসাবধানতাবশত: পানিতে পড়ে যায়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। হালিশহর ‘এ’ ব্লক বাস স্ট্যান্ডের কাছে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ডোবা থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়েছিল গত বছর ২৯ অক্টোবর। কেন কীভাবে তার মৃত্যু হলো, সে বিষয়টি নিয়ে ১৪ মাস ধরে (এক বছর দুই মাস) তদন্ত করেও পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। অবশেষে ময়না তদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে শ্বাসরুদ্ধ করে শিশু আরিয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। আজাদীর কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আরিয়ানের বাবা সাইফুল ইসলাম জুয়েল এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আল মামুন। তবে কেন এই হত্যাকাণ্ড সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি দুজনের কেউই।
আরিয়ানের বাবা জুয়েল বলেন, গত এক বছরে আমি বারে বারে শুধু এ বিষয়টি খোঁজার চেষ্টা করেছি যে, কেন আমার ছেলের মৃত্যু হল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট জানার পরও বুঝতে পারছি না, কার দোষে আরিয়ানকে খুন হতে হল। তিনি বলেন, আমার পরিবার কিংবা আমার শ্বশুরের পরিবারের কারো সাথে কোনো পারিবারিক বিরোধ বা রাজনৈতিক বিরোধ আছে, এমনটি শুনিনি, দেখিনি। এমনকি পাড়া প্রতিবেশীর সাথেও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কোনো মনোমালিন্য ছিল না। আল্লাহর কাছে বিচার চাইছি, এ জঘন্য ঘটনা যে বা যারা ঘটিয়েছে, তাদের যেন উপযুক্ত বিচার হয়। আইনশৃক্সখলা বাহিনীর উপরও ভরসা আছে। দেখি কী হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আল মামুন আজাদীকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। আরিয়ানের পরিবারের সদস্যরাও আমাদের কিছু জানাতে পারছে না। তবু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও আশা ছাড়িনি। হত্যার আগে তাকে বলাৎকারের চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু তার পরনের প্যান্ট উল্টো করে পরা ছিল, সেহেতু প্রথম অবস্থায় আমরাও বিষয়টি অনুমান করেছিলাম। কিন্তু না, এধরনের কোনো কিছু রিপোর্টে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ঢাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জুয়েলের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয় গতবছর ৭ আগস্ট। সাইফুলের শ্বশুর মো. মঈনউদ্দীন তাঁর মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে ১৮ আগস্ট শাপলা আবাসিক এলাকায় নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। উদ্দেশ্য নবজাতক ও তার মায়ের দেখাশোনা করা। কিন্তু সাইফুল দম্পতির আনন্দ বিষাদে পরিণত হয় বড় ছেলেকে হারিয়ে। যেখান থেকে আরিয়ানের লাশ উদ্ধার করা হয় তার অদূরেই নানার বাসা। গত বছর ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে সে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তার মা মারজান আক্তার ওই রাতেই পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। এছাড়া এলাকাতে মাইকিং করা হয়েছিল। ২৯ অক্টোবর শাপলা আবাসিকের বিপরীতে হালিশহর থানাধীন দারুল ফোরকান মাদ্রাসার পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভেতর জমে থাকা পানিতে উপুড় হয়ে থাকা আরিয়ানের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়।
আরিয়ানের বাবা সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আমার ছেলে খেলতো বাড়ির সামনেই। রাস্তা পার হয়ে সন্ধ্যার সময় এখানে এসে পানিতে নামবে, আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না। তাছাড়া বাসা থেকে বের হয়ে একা এতদূর আসা তার পক্ষে সম্ভবও নয়। কারণ সেতো এই এলাকার কিছুই চিনে না। এখন পুলিশের ওপর ভরসা করে আছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধআমদানি ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ ইস্যুতে জটিলতা