পাটের বস্তার দেখা নেই

ধান, চাল চিনিসহ ১৯ পণ্য পরিবহন ও মজুদ ৯০ শতাংশই প্লাস্টিক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ সেই ১৯ পণ্য এখনো পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিকের বস্তায়। অথচ সরকার তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এসব পণ্য পাটের বস্তায় পরিবহন ও মজুদকরণ বাধ্যতামূলক করে। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে বলে জানায় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্তারা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো বাজারই এখন প্লাস্টিকের বস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে। এতে পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি উদ্যোগটাও এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিক বস্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানও নেই। এই সুযোগটাই মূলত কাজে লাগাচ্ছে ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা।
চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, গত দুই বছর আগেও প্লাস্টিক বস্তার ব্যবহার কমে যায়। কিন্তু এখন হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ৯০ শতাংশই পরিবহন ও মজুদ হচ্ছে প্লাস্টিক বস্তায়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে একটি পাটের বস্তার দাম পড়ছে প্রায় ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, পক্ষান্তরে একটি প্লাস্টিক বস্তার দাম পড়ে ১৭-১৮ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরাও পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আটা-ময়দার ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটা-ময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায় আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ আবার মিশে যায়। অনেক সময় ধুলাবালি বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটা-ময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটা-ময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহার আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটা ময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত দুই বছর আগে পাটের বস্তার ব্যবহার বেড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার প্লাস্টিক বস্তার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাটের বস্তার ব্যবহার কমে যায়। দাম এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, আড়তদারদের যেভাবে মিলাররা চাল পাঠাচ্ছে আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। বর্তমানে নওগাঁ ও আশুগঞ্জ থেকে যেসব চাল আসছে সবই প্লাস্টিকের বস্তায় আসছে বলা যায়। ফলে বাজারে এখন প্লাস্টিক বস্তার ছড়াছড়ি হয়ে গেছে। তবে আড়তগুলোতে অভিযান না চালিয়ে প্রশাসনে উচিত ধান চালের মোকামগুলোতে নজরদারি বাড়ানো। পণ্য প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বস্তার পরিবর্তে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত সেখান থেকেই করতে হবে। এছাড়া এখন যেসব চাল আমদানি হচ্ছে, সেগুলোও আসছে প্লাস্টিক বস্তায়।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে প্লাস্টিকের বস্তা সয়লাব হয়ে গেছে, এটি ঠিক। তবে আমরা শুনেছি, পাটের বস্তার সংকটও আছে। পাটের বস্তা পরিবেশবান্ধব। তবে বাজারে একতরফাভাবে অভিযান না চালিয়ে প্রশাসনের উচিত যেখানে পণ্য মোড়কীকরণ হচ্ছে সেখানে যেন অভিযান চালানো হয়।
উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে গত ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ-খুদ-কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এদিকে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০-এর ধারা-১৪ অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনুর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ অপরাধ পুনঃসংগঠিত হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসারা দেশ ছিল সভা সমাবেশে মিছিলে উত্তাল
পরবর্তী নিবন্ধআমি কথা বলতে প্রস্তুত : মেগান