পাওয়া যায়নি অস্ত্র, পালিয়ে গেছে অস্ত্রধারী

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংঘাত

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ৩ মার্চ, ২০২১ at ১০:০৮ অপরাহ্ণ

এক মাস আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলের খোঁজ পায়নি পুলিশ। খুঁজে পায়নি পাথরঘাটার গুলিবর্ষণকারী ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত সেই যুবককেও যে নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েছিল।
গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ হলেও অপরাধীকে ধরতে পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বলেই অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটে যাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল। বিডিনিউজ
ভোটের আগে ১২ জানুয়ারি নগরীর মোগলটুলি এলাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থকদের। তাতে নিহত হন আজগর আলী বাবুল নামে একজন।
ভোটের দিন ২৭ জানুয়ারি সকালে নগরীর আমবাগান এলাকায় গুলিতে নিহত হয় আলাউদ্দিন নামে এক যুবক। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক নাশতা করতে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন বলে পরিবারের ভাষ্য।
ভোটের দিন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের বাইরে এক যুবককে প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।
বাহাদুরের সমর্থক বাবুল নিহতের পর পুলিশ কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদেরসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। বাবুলের ছেলের করা মামলায় তাদের আসামি করা হয়।
পুলিশ সেদিন ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছিল বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, “সেভেন পয়েন্ট ৬৫ বোরের দুটি এবং পয়েন্ট ৩২ বোরের একটিসহ মোট তিনটি পিস্তলের গুলির খোসা পাওয়া গিয়েছিল। নিহত বাবুলের পিঠে লাগা গুলিটি সেভেন পয়েন্ট ৬৫ বোরের পিস্তলের গুলি বলে ব্যালেস্টিক রিপোর্টে জানা গেছে।”
তবে কার পিস্তলের গুলিতে বাবুল নিহত হয়েছিলেন, তা এখনও শনাক্ত করা যায়নি বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত।
তিনি বলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের দুই দফায় রিমান্ডে আনা হয়েছিল কিন্তু গুলি যে করেছে, তাকে চিহ্নিত করা যায়নি এবং পিস্তলটিও উদ্ধার হয়নি।”
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কাদের জামিনে মুক্তি পান।
ভোটের দিন আমবাগান এলাকায় গোলাগুলিতে নিহত আলাউদ্দিনের বোন জাহানারা বেগম বলেছিলেন, “সকালে নাস্তা খেতে বের হয় আলাউদ্দিন। নাস্তা করে সে কাজে যাবার কথা ছিল। মোড়ে পৌঁছাতেই লাটিম মার্কার (আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর মার্কা) লোকজন এসে গুলি করে।”
সেই ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় জাহানারা বাদী হয়ে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো আসামি ধরা পড়েনি এখনও।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার এসআই সোহরাব হোসেন বলেন, “সব আসামি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।”
তিনি জানান, ঘটনার পরদিন থুলশী থানা পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি বন্দুক উদ্ধার করেছিল। আর তারাও ঘটনাস্থল থেকে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের খোসা উদ্ধার করেছিলেন। মামলার তদন্তে উদ্ধার করা বন্দুকটি আমলে আনার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
এসআই সোহরাব বলেন, “এখনও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরীক্ষা করার জন্য আবেদন করা হবে, উদ্ধার করা বন্দুকটি থেকে ছোড়া গুলিতে আলাউদ্দিন মারা গেছে কি না।”
মামলার বাদী জাহানারা বেগম জানান, যাদের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন, ঘটনার পরপর তারা এবং তাদের পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তবে এখন ফিরেছে।
তিনি বলেন, “আসামিদের মধ্যে নাছির, ইমন ও জজ মিয়াকে বিভিন্ন সময়ে ঝাউতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে আমি নাছিরের সাথে কথাও বলেছি। তাদের বিষয়ে পুলিশকে বলেছি কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে না।”
নির্বাচনের দিন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া যুবকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, সরু একটা গলি থেকে বের হয়ে পিস্তল হাতে গুলি ছোড়ে এক যুবক। কালো, প্যান্ট, হলুদ কালো জ্যাকেট পরা ওই যুবক গুলি ছোঁড়ার পর দলবল নিয়ে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালির নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, “আমরা অস্ত্রধারী ওই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তাকে ধরতে আমরা অভিযানও চালিয়েছি। কিন্তু সে পালিয়ে গেছে।”
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, গুলিবর্ষণকারী ঐ যুবক নগর ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত।
ওসি বলেন, “বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি সে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামিন পেলেন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালি
পরবর্তী নিবন্ধদুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলেন বাবা