পাঁচ স্থানে বাইপাস-ওভারপাস

নির্মাণ কাজ শুরু হবে ২০২৫ সালে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পণ্য পরিবহনে এই উদ্যোগ

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের যে পাঁচ স্থানে ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে সেসব স্থানের বিকল্প হিসেবে চারটিতে বাইপাস এবং অপরটিতে ওভারপাস নির্মাণ করবে সরকার।

মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের পণ্য পরিবহন ও যানবাহন চলাচল সহজতর করতেই সরকার এই উদ্যোগ নেয় অনেক আগেই। বিকল্প এসব বাইপাসওভারপাস নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরেই।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পণ্য পরিবহন ও যানবাহন চলাচল একেবারে সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটিতে বিকল্প এসব সড়ক নির্মাণের কাজ পিছিয়ে গেছে। ২০২৩ সালে শুরুর কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ায় আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় নিচ্ছে সরকার।

এর পর দুইবছরের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২০২৭ সালের ভেতরই এসব বিকল্প সড়ক নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূলত জাপানি কোম্পানি এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় পরবর্তী ধাপ শুরুর কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এই কারণে পুরো প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে।

চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে বাইপাসওভারপাস নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে মহাসড়কটির পাঁচ স্থানে চারটি বাইপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করতে জাপানি প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কোয়েই’ ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে সার্ভে (জরিপ) করার কাজ শেষ করেছে।

সেই সার্ভে কাজের প্রতিবেদন চলতি মাসেই জমা দেওয়ার কথা।

তিনি বলেন, জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সার্ভে প্রতিবেদন পাওয়ার পরই সে প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ডিপিপি তৈরি করা হবে। এর পর ডিপিপি একনেকে অনুমোদন হলেই কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। যাতে কাজটি দ্রুততার সাথে এগিয়ে নেওয়া যায়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, একনেকে ডিপিপি অনুমোদনের পর বাইপাসওভারপাস নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব যাবে স্ব স্ব জেলা প্রশাসনে। এর পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে জমি মালিকদের।

প্রকল্প পরিচালকের ভাষ্য, ডিপিপি, প্রকল্পের ডিজাইন ও দরপত্র তৈরি করতে ২০২৪ সাল নাগাদ সময় লাগতে পারে। এরপর ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজ শুরু করতে ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এসব কাজ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা গেলেই ওই সময়ের মধ্যে এসব বাইপাসওভারপাস নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কটির যেসব স্থানে নির্মিত হবে বিকল্প সড়ক, সেগুলো হলোচকরিয়া, লোহাগাড়া, দোহাজারী ও পটিয়া। আর ওভারপাস বা ফ্লাইওভার নির্মিত হবে সাতকানিয়ার কেরানিহাটে। সেই বাইপাসগুলো নির্মাণের আগেই মহাসড়কটিতে ছয় লেনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নির্মাণকাজ এখন অনেকটাই শেষের দিকে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সেই বন্দর থেকে প্রাথমিকভাবে দিনে অন্তত ৪ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবে। কিন্তু বিদ্যমান দেড়দুই লেনের এই মহাসড়কটি বিপুল গাড়ির চাপ সামলাতে পারবে না। তাছাড়া আগামী ২০২৬ সালের আগেই অতি গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা যাবে না।

সূত্র জানায়, এই অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের পণ্যবাহী গাড়ি এবং কক্সবাজারমুখী পর্যটকদের বিপুল গাড়ির চাপ সামাল দিতে এই মহাসড়কে ৪টি বাইপাস এবং একটি ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। এ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিল দেশের উন্নয়ন সহযোগী জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহাসড়কটির পাঁচ স্থানের যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা। সেই বাইপাস প্রকল্পও ২০২৬ সালের আগে নির্মিত হচ্ছে না।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী অনেকে বলেছেন, ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কটি পটিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত দেড় লেনের। এর পর দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। পটিয়া অংশে অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের পাশাপাশি সড়কটি আঁকাবাঁকা। যদিও সেই বাঁক কিছুটা সোজা করার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু কক্সবাজারমুখী পর্যটক এবং রোহিঙ্গা চাপ যে হারে বাড়ছে তাতে সড়কটি এখনই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে কক্সবাজার১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার ঘিরে ব্যাপক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর পরই মহাসড়কটিতে পরিবহনের চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। সেই বাড়তি চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেটি নিয়েও পিজিবিলিটি স্টাডি করেছে জাপানি আরেক প্রতিষ্ঠান।

এমপি জাফর আলম বলেন, ইতোমধ্যে সেই স্টাডি রিপোর্ট জমা হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ মহাসড়কটি ছয় লেনে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তাই মহাসড়কটিতে যানজট এড়িয়ে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতেই বিকল্প হিসেবে পাঁচটি বাইপাসওভারপাস নির্মাণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ আজ
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু