পশু-পাখীদের অদ্ভুত কিছু আচরণ

অনিক শুভ | বুধবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২১ at ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

পশু-পাখীদের আমরা প্রায় সবসময় তাচ্ছিল্য করে থাকি। কিন্তু এইসব পশু-পাখী সরাসরি আমাদের অনেক উপকার করে। এরা শুধু পরিবেশের ভারসাম্যই রক্ষা করে না, উদ্ভিদের সার জোগান থেকে শুরু করে বনভূমির পোকাও নিয়ন্ত্রণ করে। সঠিক উপায়ে প্রশিক্ষণ পেলে এরা মানুষের প্রতি স্পর্ধী হয়ে উঠতে পারে। মানুষের সকল তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, অত্যাচার সহ্য করে কেন তারা আবার মানুষের উপকার করে সেসব অবাক করা পশু-পাখীদের ক্ষমতা নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।
“মাই ফোরফুটেড অ্যান্ড ফেদারড ফ্রেন্ডস” বইতে লেখক ভ্লাদিমির ডুরভ “ফঙটেরিয়ার” জাতের এক কুকুরের কথা লিখেছেন। কুকুরটির নাম ছিল পিকি এবং সে কাজ করতো ডুরভের সার্কাসে। তিনি বিশ্বাস করতেন পিকির ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা আছে, যার ফলে সে মানুষের মনের যেকোন চেতনা উপলব্ধি করতে পারে।
তিনি আরো বলেন- ডাকার সাথে সাথে পিকি এসে আমার পাশে বসতো, তারপর আদর খাওয়ার জন্য কাতরতা প্রকাশ করত চোখের ভাষায়। ওকে অন্য কুকুরের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে, কারণ ও খুব উন্নত মনের, খুব সহজে বুঝতে পারত মানুষের সকল মনের ভাব ও ভালবাসা।
ডুরভ তার আত্মজীবনীতে পিকি কে নিয়ে লিখেন- আমি যখন পিকিকে টেবিল থেকে কোন নিদৃষ্ট বই আনতে বলতাম তখন সে সেই বইটি মুখে করে নিয়ে আসতো।
ডুরব ও তার পোষা কুকুর পিকির এই আশ্চর্য কাহিনী আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লে সকলে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে , কুকুর হলে কি হবে, পিকি ছিল আশ্চার্য ক্ষমতার অধিকারী। ফলে শুরু হল ওকে নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা নিরীক্ষা। প্রথমে তাকে একটি নিদৃষ্ট রুমাল আনতে বলা হল। কয়েক মিনিটের মধ্যে পিকি সে রুমালটি মুখে করে নিয়ে আসলো। এরপর তাকে নির্দেশ দেওয়া হল উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে নিদ্রিষ্ট এক জনের হ্যান্ডগ্লাভস নিয়ে আসার জন্য। পিকি কথা শেষ হওয়ার আগেই গ্লাভসটি মুখে করে নিয়ে এসে সামনে রাখল। এবার আরেক পরীক্ষার পালা। পিকিকে এক লোকের ছবি দেখিয়ে তাকে খুঁজে বের করতে বলা হল। পিকি সাথে সাথেই ঐ লোকটিকে খুঁজে তার গায়ে থাবা দিয়ে আঁচর দিল।
চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটতে দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল, আর মানতে বাধ্য হল পিকি কুকুর হলেও মানবসুলভ আশ্চর্য ক্ষমতা আছে তার।
এবার আরেকটা ঘটনাতে আসা যাক। ক্যালিফোর্নিয়ার এন্ডারসনে বসবাসরত স্টাকে উডস নামে এক শিক্ষকের সুগার নামে একটি বেড়াল ছিল। হঠাৎ স্থান পরিবর্তের কারণে তিনি সুগারকে তার প্রতিবেশীর কাছে রেখে যান। দিনেরপর দিন অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে উডস ও তার পরিবার সুগারের কথা একেবারেই ভুলে গেল। কিন্তু একদিন যখন উডস তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ফার্ম হাউজে কাজ করছিলেন, দেখলেন একটি বেড়াল মিসেস উডসের কাঁধে লাফিয়ে পরল। সাথে সাথে তাদের সুগারের কথা মনে পড়ে গেল। তারা হাসতে হাসতে বললেন এটা নিশ্চই সুগার আর ও ফিরে এসেছে। তারপর তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার পর বুঝল এ সুগার’ই। কিন্তু কিভাবে পনেরশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বেড়ালটি একশহর থেকে অন্য শহরে আসলো এটা খুব বিস্ময়ের। উডস তার প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগ করলেন। প্রতিবেশী জানালেন, উডস চলে যাওয়ার তিনদিন বাদে সুগার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। চৌদ্দ মাস একটানা পথ ভ্রমণ করে অবশেষে বেড়ালটি তার প্রভুর কাছে ফিরে আসে। অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা এর গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হননি।
হিডেন স্প্রিংসের লেখক রেনি হায়ানস তার বইতে একটি কুকুরের কথা উল্লেখ করেন। সেখানে তিনি লেখেন, একটি কুকুরের প্রভু প্রায় মাঝে মাঝে বিদেশ যেতেন এবং তিনি কখন ফিরবেন তার নিদৃষ্ট কোন সময় থাকতনা। কিন্তু তার কুকুর বলে দিতে পারত তার প্রভু কখন ফিরবে। তাই সে নিদৃষ্ট দিনে গেটের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো। যত রাতই হোক না কেন প্রভু সেদিন ফিরে আসত। যখন কুকুরটিকে বাড়ির লোকেরা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতো তখন তারা বুঝতে পারত যে এবার গৃহ কর্তার ফেরার সময় হয়েছে। এটিও আশ্চর্য ঘটনার মধ্যে একটি।
এবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক রাজহাঁসের ঘটনা বলি। একদিন ব্রাগার্ড শহরে রাজহাঁসটি পাগলেরমত ছুটোছুটি করতে শুরু করল। সাথে প্যাঁক প্যাঁক করেইতো ডাকছে। লোকেরা তখন তার এই অদ্ভুত আচরণে অবাক হয়ে গেল এবং তারা সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেল। এর কয়েক মিনিট পরেই শত্রুপক্ষের বিমান এসে সেই অঞ্চলে নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করলো। হাসটির এমন অদ্ভুত আচরণে যদি শহরের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে না যেতেন তাহলে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।
দেশ বিদেশে এরকম অদ্ভুত পশু-পাখী নিয়ে আরো অনেক অবাক করা সত্যিকারের গল্প বা ঘটনা আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা আজো আমাদের দিতে পারেন নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশৈশবের ঐ দিনগুলো
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচনী প্রচারণা