পশুর হাট কখন থেকে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগরে কোরবানি পশুর হাট শুরু হওয়ার কথা আগামী ১২ জুলাই। অথচ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বহাল থাকবে আগামী ১৪ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত। অর্থাৎ বাজারের প্রথম দিনও বিধিনিষেধ থাকছে। এতে এবার কোরবানি পশুর হাট নির্দিষ্ট দিনে হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি হলে আরো এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বিধিনিষেধের সময়সীমা। সেক্ষেত্রে আদৌ বাজার বসবে কীনা সেটা নিয়ে আরো বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। অবশ্য নগরে ছয়টি পশুর হাট বসাতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে সর্বশেষ গতকাল বুধবার রাতে তিনটি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ করেছে সংস্থাটি। বাজারগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ। এছাড়া গত পহেলা বৈশাখ তিনটি স্থায়ী পশুর হাট তথা সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারে ইজারাদার নিয়োগ করেছিল। এছাড়া পুরো চট্টগ্রামে ২০৬টি পশুর হাট বসানোর প্রস্ততি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
এদিকে নগরের স্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদাররা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। খামারিরা বাজারে পশু আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে হৃষ্টপুষ্ট করা গরু বাজারে নিয়ে আসতে লোকজন আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব বেপারি প্রতি বছর চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসেন তারা আসবে কিনা সন্দেহ আছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারের ইজারাদার তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। কিন্তু ইজারাদারদের বেপারিরা জানিয়েছেন, বিধিনিষেধের মধ্যেও গরু আনা যাবে কীনা সরকার স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাই তারাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাছাড়া ১২ জুলাই পশুর হাট শুরু হলে তাদের রওয়ানা দিতে হবে ১০ বা ১১ জুলাই। ওইসময়ও বিধিনিষেধ থাকবে। বিধিনিষেধের মধ্যে পশুর হাট বসবে কিনা সেটা নিয়েও সরকার কোনো ঘোষণা দেয়নি। তাই ঝুঁকি নিয়ে পশু আনলেও বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে।
হাট বসার ইঙ্গিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের : কোরবানির বিষয়ে গত ১৩ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভা হয়। ওই সভায় পশুর হাট বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পশুর হাট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ১০টি সিদ্ধান্তও হয়েছে ওই সভায়। এতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, শেষ পর্যন্ত কোরবানি পশুর হাট বসবে সারা দেশে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছিলেন- ‘আসন্ন ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর বাইরে পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় আমাদের দেশেরও কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় এ ভেরিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। তাই এ বছর সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই পশুর হাট বসানো হবে।’
ইজারাদাররা যা বলেন : বিবিরহাট বাজারের ইজারাদারের পার্টনার আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বাজার কেমন হবে সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্ধে আছি। কারণ, প্রতিবছর বাজারে বেশিরভাগ গরু আসে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। এবার লকডাউনে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, মাগুরা ও রাজশাহীর অনেক বেপারির সঙ্গে মুঠোফোনে নিয়মিত কথা হচ্ছে। তারা চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসার ব্যাপারে আগ্রহী। আবার লকডাউনে পথে সমস্যা হবে কীনা সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত। আবার চট্টগ্রাম এলেও লকডাউনে বাজারে ক্রেতা সংকট হবে কীনা সেটাও ভাবছে তারা। সবমিলিয়ে একধরনের দো-টানায় আছে তারা।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বাজার জমবে সেটা নিয়ে আমরা আশাবাদী। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা চাই। গরু নিয়ে আসা ট্রাকের যেন পথে কোনো ভোগান্তি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিবিরহাট বাজারে আমরা সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে ত্রিপল টাঙ্গিয়েছি। সিসিটিভি’র ব্যবস্থা করেছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনেছি।
মইজ্জ্যারটেক ও পোস্তার পাড় বাজারের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর আজাদীকে বলেন, বাজার বসবে। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে হৃষ্টপুষ্ট গরুও বাজারে আসবে। চট্টগ্রামের খামারিদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারাও গরু নিয়ে আসবেন। ভারত থেকে না আসলেও মিয়ানমার থেকে এবার গরু এসেছে। লকডাউন হলেও গরু আসতে পথে কোনো বাধা নেই। ফলে এবার গরুর কোনো সংকট হবে না।
মইজ্জ্যারটেক বাজারের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ৮০ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় ত্রিপল দিয়েছি। বাংলাদেশে আর কোথাও এত বড় জায়গায় সুন্দর ব্যবস্থাপনায় গরুর বাজার হবে না। সামজিক দূরত্ব নিশ্চিতে খন্ড খন্ড ত্রিপল করা হয়েছে। ১২ ফুটের রাস্তা রেখেছি। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছি।
চসিকের বক্তব্য : চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্ত মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, তিনটি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ সম্পন্ন করেছি। ইজারামূল্য গতবারের চেয়ে কম। কিন্তু রি-টেন্ডার করার সময় নাই। তাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সব প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ইজারাদারদের বলে দিয়েছি। আমরাও কঠোর মনিটরিং করবো।
১২ জুলাই পশুর হাট শুরু কথা বলা হলেও ১৪ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ বহাল থাকায় সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, কনফিউশনে আছি। তবে বাজার বসবে না এমন কোনো নির্দেশনা কিন্তু সরকার দেয়নি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়।
গরুর মজুদ কেমন : জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে সম্ভাব্য চাহিদা আছে আট লক্ষ নয় হাজার পশুর। বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছে সাত লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি। এরমধ্যে গবাদিপশু ৫ লক্ষ ১০ হাজার ৪০টি, মহিষ ৬৩ হাজার ১৩৬ টি, ছাগল ও ভেড়া এক লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৩টি এবং অন্যান্য ৯৫ টি।
এদিকে গত ৪ জুলাই থেকে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি করেছে ব্যবসায়ীরা। ১ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত চারদিনে ৮৩টি গরু এসেছিল মিয়ানমার থেকে। তারও আগে গত মে ও জুন দুই মাসে মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও চার হাজার ২৫৮টি মহিষ আমদানি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবার (২০২০) চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরের তিনটি থানায় ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয় বলে দাবি করা হয়েছিল। গতবার কোরবানির আগে সম্ভাব্য পশুর চাহিদা ঘোষণা করা হয়েছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন এবং অন্য জেলা থেকে আসা গরু মিলিয়ে সংকট হবে না বলে প্রচারণা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সংকট হয়েছিল পশুর। নগরের বিবিরহাটসহ কয়েকটি বাজার শেষ দুইদিন ছিল প্রায় গরু শূন্য। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, এবার পশুর সংকট হবে না। স্থানীয় উৎপাদনের সাথে অন্য জেলা থেকে আসা গরুও যোগ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭ দিনে ৭৫১ মামলা, ৫৪০ গাড়ি আটক
পরবর্তী নিবন্ধকালো টাকা সাদা করাতেও রেকর্ড