পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে

| শুক্রবার , ২০ মে, ২০২২ at ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

একটা অস্থিরতা চলছে আমাদের জাতীয় জীবনে। রাজনৈতিকভাবে খুব বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা না থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে চলছে এই অস্থিরতা। ভোজ্যতেলের সংকট অস্বাভাবিক। পেঁয়াজসহ ভোগ্য পণ্যের বাজারও উর্ধ্বমুখী। এদিকে ধারাবাহিকভাবে কমছে টাকার দাম। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ডলারের মূল্যের প্রতিফলন হচ্ছে না বাজারে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১১ টাকা বেশি দামে ডলার কিনছে। একদিন আগেও প্রতি ডলারে ৮০ পয়সা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া মূল্য বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৮৭ টাকা। যদিও বাজারে এ দরে কেউ ডলার লেনদেন করতে পারছে না। বেশ কিছু ব্যাংক ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা দরে ডলার কিনে আমদানি দায় পরিশোধ করেছে। এ দিকে দফায় দফায় ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন ব্যয়। যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত দুই মাসে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে ডলারের মূল্য ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে যে পরিমাণ ডলার সরবরাহ হওয়ার দরকার তা হচ্ছে না। প্রতি মাসেই প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার সরবরাহ কম থাকছে। আর এ ঘাটতির একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদে বিক্রি করে মেটানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ওপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সরবরাহ করেছে। যেভাবে আমদানি ব্যয় বাড়ছে সরবরাহের দিকে বড় উন্নতি না হলে সামনে ডলারের দাম আরো বেড়ে যাবে। যার প্রভাব নিত্যপণ্যের ওপর পড়বে। কারণ বেশি দামে পণ্য কেনা হচ্ছে। আজকে যে পণের এলসি খোলা হচ্ছে তা পরিশোধে ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। আর এতে স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছর জুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, ডলারের দাম বাড়ায় ও রিজার্ভে টান পড়ায় এখন বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ঋণপত্র খোলার সময় নগদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এর ফলে মোটর কার (সেডান কার, এসইউভি ইত্যাদি), হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সামগ্রীর আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
অর্থনীতিবিশ্লেষকরা বলেন, দেশের অর্থনীতির সামনে এক কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে। আমাদের অর্থনীতির শক্তির জায়গা ছিল বৈদেশিক খাত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সে অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। ডলারের এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে