পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক

মাওলানা এম সোলাইমান কাসেমী | শুক্রবার , ২২ মার্চ, ২০২৪ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহের অন্যান্য মাস সমূহ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতির সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ আল কোরআন। যে মাসে নাযিল করা হয় সে মাসের পবিত্রতা, মাহাত্ম্য ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। আরবি মাস সমূহের এই ‘রমজান’ মাসে পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন আসমানি কিতাবসমূহের সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন। শুধু কোরআন শরিফই নয়, পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহ ও সহিফাগুলোও এই পবিত্র রমজান মাসে নাযিল করা হয়। রমজান মাসের প্রথম অথবা তৃতীয় দিনে হযরত ইব্রাহিম (.) সহিফা লাভ করেন, ৬ষ্ঠ তারিখে হযরত মূসা (.) –এর কাছে পবিত্র ‘তাওরাত’ পৌঁছায়। হযরত দাউদ (.) –এর কাছে পবিত্র যাবুর নাযিল হয় এই পবিত্র মাসের ১৮ তারিখে, আর হযরত ঈসা (.) এর পবিত্র ‘ইনজিল’ লাভ করেন এই মাসের ১২ তারিখে। এ থেকে সহজেই পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য বোঝা যায়।

রোজা’ একটি ফারসি শব্দ, আরবি ভাষায় রোজাকে ‘সিয়াম’ বলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম করাকে রোজা বলে। ‘সিয়াম’ শব্দেরও ঐ একই অর্থ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হল সিয়াম বা রোজা। শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা বা ‘উপবাস’ ব্রত বললে ‘সিয়াম’ এর সঠিক রূপ প্রকাশ পায় না। ‘উপবাস ব্রত’ পৃথিবীর সকল ধর্মেই রয়েছে। তবে সুদীর্ঘ একমাসব্যাপী ভোর (সোবহে সাদেক) থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত উপবাস এবং সেই সঙ্গে কঠোর সংযম সাধনার বিধান ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর অন্য কোনও ধর্মে নেই। ‘রমজ’ শব্দ থেকে এসেছে ‘রমজান’। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ হল জ্বালিয়ে দেওয়া, দগ্ধ করা। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের মনের কলুষকালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে, পাপ রাশিকে সম্পূর্ণ রূপে দগ্ধ করে দিয়ে মানুষকে করে তোলে পূণ্যবান, যোগ্য করে তোলে সাধারণ মানুষকে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অসাধারণ করুনা ও ক্ষমা গ্রহণ করার জন্য। স্বভাবতই নামাজের পরেই মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালা যে এবাদত ফরজ করেছেন তা হল পবিত্র রমজান মাসের রোজা। পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল। আশা করা যায় যে, তোমরা মুত্তাকী হবে।’ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত শরিয়ত দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রোজা রাখার বিধিব্যবস্থা ছিল। নামাজের মত এই রোজাকে ও আবহমানকাল থেকেই সকল নবির শরিয়তেই ফরজ করা হয়েছে। মাহে রমজানের এই রোজার মাধ্যমে সংযম সাধনার ফলে মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভ করার। মহান আল্লাহ পাকের দরবারে এই মিনতি করি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে পবিত্র এই রমজানে মাসে তোমার রহমত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না এবং মুসলিম উম্মাহর উপর শান্তি ও রহমত নাযিল করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোকসানার জন্য এলিজি
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা