করোনা মহামারির ২য় ঢেউয়ের মাঝে এবার আমরা পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। তাই আমাদের সবারই উচিৎ কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সজাগ থাকা, যা একান্ত প্রয়োজন।
যেহেতু জীবন জীবিকা পরস্পর সমার্থক। অর্থাৎ একই সূত্রে গাঁথা। তাই সরকারকেও এই লক ডাউনেও কিছুও ছাড় দিতে হয়েছে জীবিকার তাগিদে। কিন্তুু আমাদের উচিত হবে নিজে আর নিজের পরিবারের সুস্থতা বজায় রেখে ঈদ আয়োজন করা। যেমন ধরা যাক ঈদের কেনা কাটার ব্যাপারে। দূরের মার্কেটে না গিয়ে সবচেয়ে কাছের ঈদের বাজার বা মার্কেটে যাবেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের এবং পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের এবং যারা রোগে ভুগছেন যেমন শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগসহ অন্যান্য রোগে ভুগছে, তাদেরকে ঘরের বাইরে না নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। যানবাহনে যাতে চলাচল কম করতে হয় সেই দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ আমি নিজ গাড়িতে করে পটিয়া যাওয়ার পথে যানবাহনের যে বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। আর একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, এই কভিড মহামারীতে কম খরচে অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন। কেননা আমাদের ধর্মেও পরম করুণাময় আল্লাহতালা মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন। তাই এই মহামারিতে ঈদের বাজেট গরীব দুঃখীদের জন্যে বাড়ালে ভাল হবে। এই পবিত্র রমজান মাসে সওয়াব বেশী হবে। কেনাকাটার ব্যাপারে আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন। আমাদের দেশে প্রবাসী আছেন, দেখা যায় তাদের পরিবারে বেশীর ভাগই তাদের স্ত্রীরাই সবার কেনাকাটা নিয়ে বাইরে যেতে হয়। যেহেতু এবারের করোনার ঢেউয়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে ১ম বারের চেয়ে এবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আনুপাতিক হারে নারী ও পুরুষ প্রায়ই সমান। তাই আমাদের মা, বোনেরা এটা মাথায় রেখে ঘরের বাইরে যাবেন এবং রাস্তাঘাটে, বাজারে ঈদ মার্কেটে চলাফেরা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ঈদের দিন যেখানে ঈদ জামাত হবে মসজিদে বা ময়দানে (খোলা জায়গায়) সব স্থানেই স্বাস্থ্যবিধি ভালভাবে মেনে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন পুরো জায়গাটাকে আগে অহঃরংবঢ়ঃরপ দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
১. নামাজের জায়গা ৩ ফিট অন্তর লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে।
২. প্রবেশদ্বারে ১ বা একাধিক পথে নামাজীদের হাতে স্প্রে করা এবং মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে, যদি কেউ ভুলে মাস্ক না আনে তাকে মাস্ক সরবরাহ করতে হবে।
৩. কোলাকুলি করবেন না প্রয়োজনে হাতের কনুই বা পিট দিয়ে কুশল বিনিময় করবেন। যাদের সামর্থ আছে হাতে মষড়াবং পরে মসজিদে যাবেন জায়নামাজসহ।
৪. ঈদের পর কারও বাসায় যাতায়াত থেকে বিরত থাকবেন। প্রয়োজনে সেল ফোনের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
সর্বোপরি সবাই নিজে এবং পরিবারের সবাই টিকা নিতে চেষ্টা করবেন। কারণ যদিও করোনার ২য় ঢেউয়ের আক্রান্তের হার নিম্ন দিকে, তবু যেহেতু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মহামারী সুনামীতে রূপ ধারণ করেছে এবং আমাদের দেশের সাথে ভারতের বর্ডার সংলগ্ন স্থান দিয়ে প্রতিদিন এখনও মানুষ বৈধভাবে বা অবৈধভাবে এসে থাকে, তাই এই সুনামী আমাদের দেশেও যে ৩য় ঢেউ আকারে আসবে না তার নিশ্চয়তা আল্লাহ ছাড়া কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তাই সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজে এবং পরিবার সমাজ ও সর্বোপরি দেশকে এই মহামারী হতে রক্ষায় সহায়তা করুন। সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
লেখক : হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ