পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়ার পথে চলল প্রথম ট্রেন

| বুধবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে পদ্মা সেতুর রেললাইন দিয়ে চলল ট্রেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের প্রায় ৯ মাস পর এই মাইলফলক রচিত হলো। যদিও বাণিজ্যিকভাবে এ পথ দিয়ে রেল চলাচলের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উৎসবমুখর পরিবেশে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে এই রেলযাত্রার উদ্বোধন করেন। খবর বিডিনিউজের। দুপুর ১টা ২১ মিনিটে সাত বগির একটি বিশেষ ট্রেন ভাঙা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনের দিকে রওনা দেয়। ট্রেনটির চালকের আসনে ছিলেন রেলওয়ের লোকোমোটিভ মাস্টার (এএলএম) রবিউল আলম।

যাত্রা শুরুর আগে রেলমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন একটা একটা করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন; তারই অংশ হিসেবে আজ এই ট্রায়াল ট্রেন চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ভাঙা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে এবং তার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাই রেলকে যশোর পর্যন্ত নিয়ে যাব। তবে তার জন্য আমাদের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পরীক্ষামূলক ট্রেনের যাত্রী হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই রেল চলার মধ্য দিয়ে আজ এই সেতু পূর্ণাঙ্গতা পেল।

এ সময় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাইদ আহমেদ বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আমাদের তিন মাস দেরি হয়েছিল। তারপরেও সময়মতো কাজ শেষ করতে পারায় আমরা আনন্দিত। এরই মধ্যে আমাদের এই অংশের কাজের ৯২ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

দক্ষিণ বাংলার ২১ জেলার বাসিন্দাদের কাছে স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতু। গত বছর ২৫ জুন সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গতকাল তার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় রচিত হলো ট্রেন চালুর মাধ্যমে।

উদ্বোধনের পর আমেরিকার তৈরি ইঞ্জিন আর চীনের তৈরি সাত বগির বিশেষ ট্রেনে করে মাওয়া প্রান্তে যাত্রা শুরু করেন রেলমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা। এই ট্রেনটির সামনে ছিল ‘গ্যাং কার’। ভাঙ্গা স্টেশন হতে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই পথ অতিক্রম করে ট্রেনটি। পরে আবার ট্রেনটি মাওয়া থেকে ভাঙ্গায় ফিরে যাবে। ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত চারটি স্টেশন ও একটি জংশন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। উদ্বোধনী ট্রেনটি যাত্রাপথে শিবচর ও পদ্মা স্টেশনে বিরতি দেয়।

লোকোমোটিভ মাস্টার (এএলএম) রবিউল আলম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম ট্রেন চালাচ্ছি। বিষয়টা ভাবতে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

পদ্মা সেতুতে ওঠা প্রথম ট্রেন দেখতে কৌতূহলী স্থানীয়রা রেললাইনের পাশে রসুন শুকাতে দেওয়া কিষাণি শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন ট্রেনের দিকে। দুধের শিশুকে কাঁধে বসিয়ে ছুটতে ছুটতে আসতে দেখা যায় এক বাবাকেও। পদ্মা সেতুর উপরে ওঠা প্রথম ট্রেনটি দেখতে অনেকেই এসেছিলেন মোবাইল ফোন হাতে। কেউ ট্রেনের ভিডিও করছিলেন, কেউ ট্রেনের সঙ্গে তুলছিলেন সেলফি। ২টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে ওঠে। এতক্ষণ ঝমঝম শব্দে ট্রেনটি চললেও সেতুর ওপর স্লিপারবিহীন রেলপথে সেই শব্দ বিলীন হয়ে গেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি, তিন প্রতিষ্ঠানকে লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধসাঙ্গু থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ড্রেজারসহ ২ শ্রমিক আটক