পদ্মা সেতু বাঙালির ইতিহাসে এক মাইলফলক

| শনিবার , ২৫ জুন, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

বহু প্রতীক্ষা ও দীর্ঘশ্বাসের অবসান হলো। বাস্তব রূপ নিলো পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। আনন্দ আজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, সবার মুখে হাসির রেখা দেখা দিয়েছে। আজ সেই হাসির প্রতিধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে, ছড়িয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী। আগামীকাল থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে সেতু। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাংশের সংযোগ ঘটবে। বিশ্লেষকরা বলেন, যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বহুল প্রতীক্ষিত এ সেতু।

বাংলার ১৭ কোটি মানুষ আজ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার অপেক্ষায়। এরই মধ্যে বহু চ্যালেঞ্জ আর বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পদ্মা সেতুর কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সকল আলোচনা-সমালোচনা, ষড়যন্ত্র রুখে পদ্মার বুকে এখন দৃশ্যমান সেতুটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বৃহত্তম ‘ মাল্টিপারপাস ব্রিজ’ হচ্ছে এই সেতু। পৃথিবীর গভীরতম পাইলের এই সেতুর ২৬৬ পাইলে ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত গেছে এই সেতুর অবকাঠামো। পদ্মা সেতুর নানা বিশেষত্বের মধ্যে আরও একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’-এর সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। যে কারণে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকার সক্ষমতা রয়েছে এই সেতুর। এর নদীতে থাকা চল্লিশটি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের এবং তীরের দুটি পিলার কংক্রিটের। প্রতিটি পিলারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। যে সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। ভাগ্যে খুলবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর। তাই পদ্মার বুকে ভাসছে বাংলার ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা। এখন শুধু অপেক্ষা আকাশ ছোঁয়ার। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু চালু হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা। এটি মোংলাবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেতুটিতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সমপ্রসারণের ব্যবস্থা থাকার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে বিশাল এলাকা গ্যাস থেকে বঞ্চিত রয়েছে আগামীতে তারা গ্যাস সংযোগ পাবে। পরে সেখানে কল-কারখানা স্থাপিত হবে, বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যে অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রবাহ এবং সড়ক ঠিক থাকে সেই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে বাধ্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। ২০৪০ সালে যে উন্নত বাংলাদেশকে আমরা দেখতে চাই সেক্ষেত্রে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একটি সেতু- তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন, কত ভাবনা! কত লেখালেখি! কত ছবি আঁকা! বলা যেতে পারে, এটি একটি আবেগের সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে আবেগে আপ্লুত। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ক্ষণে উৎসবের আনন্দ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, দেশবাসীর ‘অভূতপূর্ব’ সমর্থনেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। তিনি বলেছেন, উৎসবটা শুধু পদ্মার পাড়েই হবে না, সারা বাংলাদেশে এই উৎসবটা করবেন। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় জেলায় উৎসব হোক। কারণ এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক চুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা আটকে দেয়, যদিও সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ আর মেলেনি। আমরা বলবো, পদ্মা সেতুর নির্মাণ একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস ও দৃঢ়তার কারণে সম্ভব হয়েছে। আমরা এ শুভক্ষণে তাঁকে অভিনন্দন জানাই।

পদ্মা সেতু বাঙালির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এই সেতু বাঙালির জীবনের একটি বড় অর্জন। এই সেতুর সাথে মিশে আছে ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে