পদে পদে রোগী হয়রানি বন্ধ করতে সাড়া দিতে হবে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে

| বৃহস্পতিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অপ্রয়োজনীয় বড়ো বড়ো টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি না করতে ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে রোগীরা পদে পদে হয়রানির শিকার। তিনি এই চরম বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেছেন। ফলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য জোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, চিকিৎসার নামে সাইনবোর্ডসর্বস্ব ও দালাননির্ভর সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগের সাথে চিকিৎসকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকের জন্য যাতে চিকিৎসার নামে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পড়েও রোগীরা, বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা, চরম হয়রানির শিকার হন। তিনি বলেন, মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ। রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যে কোনো রোগীর পরম কাম্য।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো স্বাস্থ্য খাতেও দৃষ্টিগ্রাহ্য অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পূর্বে বিভিন্ন জটিল চিকিৎসার জন্য মানুষ ছিল রাজধানী ঢাকার উপর নির্ভরশীল। এখন জেলাউপজেলায় অনেক উন্নত মানের স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আজ বেসরকারি খাতেও স্বাস্থ্যসেবা বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিবিচ্যুতি এখনো রয়ে গেছে। সরকারিবেসরকারি উভয় খাতেই বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। বর্তমানে গ্রামীণ ও মফস্বল এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দোটানায় পড়েছে। অনেকে বেসরকারি হাসপাতালক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে। সেখানে আস্থার সংকটও আছে। অন্য দিকে সরকারি খাতে অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় পদে পদে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাস্থ্য খাত আর দশটি খাতের মতো নয়। এখানকার অনিয়ম বহু মানুষের জীবনমৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। নকল এক্সরে ফিল্ম আর ভেজাল বা নিম্নমানের ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে সঠিক রোগ পরীক্ষা কখনো সম্ভব হবে না। আর ভুল রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া চিকিৎসা রোগীর কোনো কাজে আসবে না। রোগীর মৃত্যুই শুধু ত্বরান্বিত হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মদুর্নীতি দূর করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুদক ও আর্থিক গোয়েন্দাদের তৎপর হতে হবে। অনিয়মের প্রতিটি ঘটনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যায় না। জনগণ যাতে প্রতারিত না হয়, জনগণ যাতে সঠিক মূল্যে চিকিৎসাসেবা পায়, পরীক্ষানিরীক্ষা সঠিক মূল্যে করতে পারেসেটি নিশ্চিতে সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। অসুস্থ ও অসৎ প্রতিযোগিতা পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবা ও পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। কেননা বেসরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানে টেস্টের নামে গলাকাটা ফি নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে সবাই একমত না হলেও তা করতে হবে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের নিবন্ধন নেই, তারা চিকিৎসার নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এর দায়ভার আমরা সবাই নিতে পারি না। সেবামূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকার যদি হাসপাতালগুলো ক্যাটাগরি করে ভারত বা থাইল্যান্ডের মতো সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে আমাদের ও রোগীর জন্য সুবিধা হবে।

সরকারিবেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে ও চিকিৎসাসেবায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও বাণিজ্য এবং ভোগান্তি দূর করতে অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারিবেসরকারি হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম মনিটারিং করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে