পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পদক্ষেপ

| মঙ্গলবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘রমজানে কোনো পণ্যের সংকট হবে না, মূল্যও বৃদ্ধি পাবে না। ভোক্তারা যদি একসাথে বেশি পণ্য না কেনে, তাহলে বাজারে পণ্যের ওপর একসাথে বেশি চাপ পড়বে না। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য দেশে এসেছে, কিছু পণ্য পথে আছে এবং কিছু ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। ভোক্তারা স্বাভাবিক পরিমাণে পণ্য কিনলে কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি বলেছেন, রোজার মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুদ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বা স্বাভাবিক সময়ে কোনো ব্যবসায়ী যদি কোনো ধরনের অবৈধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, মূল্যবৃদ্ধি করার চেষ্টা করেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বলা দরকার যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা থেকে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয়টি অনুভব করা যায়। নিত্যপণ্যের দামের বর্তমান লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সব স্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গরিব আছে সংকটে আর মধ্যবিত্তরা দিশেহারা। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলান করার কোনো পথ তারা খুঁজে পাচ্ছে না।

বলা যায়, রমজান মাস আসার আগেই বাজার অস্থিতিশীল। সরকার ইতোপূর্বে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এর কোনটিই হালে পানি পায়নি। বারবার চেষ্টা করেও সরকারের কোনো উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। অথচ একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিসব মিলিয়ে ভোক্তার নাভিশ্বাস এখন চরমে। সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চাল কিনলে ফুরিয়ে যাচ্ছে লবণের পয়সা। দাম তারপরেও বাড়ছে। কেন বাড়ছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবু বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা আশ্বস্ত হতে চাই। তিনি যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, তাতে যেন তিনি অটল থাকেন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘সরকারের কাছে বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার তিনটি. পণ্যের ওপর শুল্ককর কমানো; . খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং ৩. বাজার তদারকি জোরদার করা। যে কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে, এর অনেকটা দায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। অথচ কৌশলগত এ পণ্যটির ওপর প্রায় ৩৪ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার কমিয়ে বাজারদর সমন্বয় করা হয়েছে। সরকার খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করছে; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর আকার অনেক বেশি বিস্তৃত ও সহজ করা প্রয়োজন। আর শেষ হাতিয়ার হিসাবে বাজার তদারকির কাজটি খুব একটি কার্যকর নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিন্ডেকেটগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা সরকার নিতে পারছে না। এ দিকটাতে নজরদারি বাড়াতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বাজার। সরকার কেবল টিসিবির মাধ্যমে এদের মজুদদারিসহ মূল্যবৃদ্ধির কৌশল ঠেকাতে পারবে না। এজন্য আরো ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন চাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের যে হিসাব দেয়া হয়, তা সম্ভবত বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দ্বিতীয়ত, বার্ষিক কী পরিমাণ চাল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে হবে, তার সঠিক হিসাব করে আমদানির ব্যবস্থা করা দরকার। তৃতীয়ত, বিশেষ পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে খাদ্যপণ্য আমদানিতে করের হার কমাতে হবে। চতুর্থত, মজুদদারির বিষয়ে কড়া তদারকি বজায় রাখতে হবে। পঞ্চমত, বাজারে মূল্য নির্ধারণ ও তা স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। সরকারও একটি কার্যকর সরবরাহ চেইন তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি নীতির ক্ষেত্রেও ভ্রান্তি দেখতে পাচ্ছেন অনেকে, যা দূর করা প্রয়োজন।

বাজার তদারকি কার্যক্রম শক্তিশালী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পণ্যের সরবরাহ যাতে যথেষ্ট থাকে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে অচিরেই। একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে বা পণ্যের অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কেউ যাতে কোনো পণ্যের বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে