পঁচাত্তরের জননেত্রী : অপ্রতিরোধ্য অবিচল

সাঈদুল আরেফীন | বুধবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

ভাবাই যায় না, একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ তো বটেই বিশ্বের অপরাপর দেশগুলোকেও ভাবিত করে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। তিনি অনন্য ও অদ্বিতীয় তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা। পিছিয়ে পড়া দেশের সামগ্রীক অর্থনীতি থেকে উত্তরণ শুধু নয়, মানুষের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করার মৌলিক গুণ সম্পন্ন করার মধ্যেই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি। তিনি এদেশের ষোলো কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সঠিক মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন, পুরো দেশজুড়ে উন্নয়নের চাকাকে সমান্তরালভাবে ঘুরিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন। হালের পদ্মা সেতু নির্মাণের মাইল ফলক তো স্থাপন করে বিশ্বে ইতিহাস যেমন রচনা করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পরিহাসের দৃষ্টিতে যা ছিলো তলাবিহীন ঝুড়ি তাতে উদ্বোধন হতে চলেছে মেট্রোরেলের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ। শুধু কি তাই, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প ছিলো উপমহাদেশে ব্যতিক্রমী একটা উদ্যোগ। যেটি আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এরকম আরো বহু মেগা প্রকল্প যখন দেশের চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে হচ্ছে, শেখ হাসিনা তাঁর মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রাজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করেছে।
ছাত্রাবস্থা থেকে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে বেড়ে ওঠা শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী হয়েছেন। মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি পেয়েছেন তাঁর কর্মগুণেই। এ বিষয়গুলো কখানো একদিনে হয়ে ওঠেনি। যার কারণে তিনি অপ্রতিরোধ্য। অবিচল। দৃঢ়চেতা নেতৃত্বগুণে তিনি বিশ্বের এখন রোল মডেলে পরিগণিত হযেছেন। তিনি আমাদের অহংকার। অবিসংবাদিত প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের গর্বিত রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মানবতার মা’ দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর পঁচাত্তরতম জন্মদিন। জাতি আজ গর্বে উদ্বেলিত। পঁচাত্তর পরবর্তী দেশে বারবার অগণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকারের নখরাঘাতে দেশের জনগণের মাঝে নাভিশ্বাস উঠেছিলো সেই সময়ে তিনি আশা আকাঙ্ক্ষার দূত হয়ে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে ছাত্র জীবন থেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা মেধা, দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের গুণাবলী থাকার কারণে বাংলাদেশে এসেও তাঁকে নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয় জীবনের বিশাল একট সময়। ক্রমে ক্রমে রক্তের মধ্য বইতে থাকা প্রবল নেতৃত্বগুণ তাঁকে বাংলাদেশের বিচক্ষণ নেতা তো বানিয়েছে, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও করেছে বিশ্বসমাদৃত। বিষয়টা একদিনের বা মাসের ছিলো না। কিম্বা হুট করেই তিনি তা অর্জন করেননি। বর্তমান বিশ্ব পরররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দূরদর্শিতা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারাও চিন্তার মধ্যে রাখতে সমর্থ হয়েছে। যেখানে এক সময় বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছিলো গণনার বাইরে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের মহান নেতা স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময়কালে জননেত্রী ছিলেন দেশের বাইরে। অত্যন্ত কঠিন সময়কালের সাথে কণ্টকাকীর্ণ পথে যুদ্ধ করে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ছয়বছর দেশের বাইরে ছিলেন জননত্রেী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভারতসহ একাধিক দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে দেশে জননেত্রীর অভাবনীয় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটে কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে। সেই সময় লাখো জনতার সমাবেশে জননেত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন’। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন’।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন এবং তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। চার দশকের প্রান্তে ক্ষমতায় থেকে তিনি দেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে পৌঁছেছেন সেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের মুখে হাসি ফোটাবার পথ প্রশস্থ হয়েছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের নিরন্তর প্রচেষ্টায় জননেত্রী দিনরাত নির্ঘুম সময় পাড়ি দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্ন আজ অনেকটাই সফল হতে চলেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন এবং তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন এক একটা মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের মানুষের স্বপ্নকে আকাশের সীমানায় তুলে ধরেছেন তিনি। এজন্য বলতেই হয়, জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনটি ছিলো একটা যুগান্তকারী ঘটনা টানা চার দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকেও নেতৃত্ব দিয়ে দলকে করেছেন সু-সংহত ও সুসংঘটিত ।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদে বিজয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী লাভ করে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বার জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। দিন বদলের সনদ, ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণের সমস্ত পরিকল্পনাকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিচক্ষণতার সাথে গুরুত্বারোপ করে যাচ্ছেন। একদিকে তিনি উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে হাত দিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অভাবনীয় উন্নয়নের আলোকশিখা জ্বালিয়ে দিচ্ছেন শত ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে নয় তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন জনদরদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে তিনি তাঁর পিতার মতো সহজেই মিশে গেছেন। মিশে যেতে চেয়েছেন মানুষের সাথে। একেবারে সাদামাঠা জীবনবোধই তাঁর পছন্দ। তাঁর প্রতিটি কথায় আচরণে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার কথাই প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাই তো পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই পৃথিবীর জন্য তো একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলা নারী-পুরুষ সকলের দায়িত্ব। মানব ইতিহাসের এমন এক সময়ে আমরা পৌঁছেছি যখন নারী-পুরুষ সমান অধিকার কেবল আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। নারীর ক্ষমতায়নের পথ সব সময় সহজ ছিলো না। কিন্ত সাহস আর ঐকান্তিক চেষ্টার মধ্যদিয়েই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে নারীর অধিকার সবার সম্মান পাবে। নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য ও সহিংসতা যেখানে হবে ইতিহাস’
তার আরেকটি বিষয় অত্যন্ত সহজবোধ্য বিষয় জনগণকে আকৃষ্ট করার মতো। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার ধরন পদ্ধতি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করে গেছেন তাঁর স্পষ্ট বক্তব্যে-‘বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও কিন্তু এটাই বিশ্বাস করি। আমরা ছোটবেলা থেকে সেভাবেই শিক্ষা নিয়েছি। আমার বাবার নির্দেশ ছিল। একজন রিকশাওয়ালাকে আপনি করে কথা বলতে হবে। বাড়ির ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলতে হবে। আর কাজের যারা লোকজন, তাদের কখনও চাকর-বাকর বলা যাবে না। হুকুম দেওয়া যাবে না। তাদের কাছে সম্মান করে চাইতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হতে পারি এখনও কারও কাছে যদি এক গ্লাস পানিও চাইতে হয় (যতটুকু পারি নিজেই করে খাই) তাদের জিজ্ঞেস করি আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবে। এই শিক্ষাটা আমরা নিয়ে এসেছি। এখনও মেনে চলি। এটা বাবারই শিক্ষা। শুধু তিনি বলে গেছেন তা না। এই শিক্ষাটা আমাদের দিয়েও গেছেন। কাজেই সেই দিক থেকে আমি মনে করি মানুষ গরিব দেখলে বা ভালো পোশাক না পরলে তাকে অবহেলা করতে পারে, কিন্তু আমাদের কাছে সেটা না। আমাদের কাছে সবাই সমান সমাদর পায়। বরং যাদের কিছু নাই, তাদের দিকে আমরা একটু বেশি নজর দিই, দৃষ্টি দিই।’
একজন আদর্শ রাজনীতিক হিসেবেই নয়, দক্ষ ও যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। ইতোমধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে পুরস্কার ও প্রশংসাধন্য হলেও তিনি তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করুক। আপনার কর্মদক্ষতা আরো বিকশিত হোক সুস্বাস্থ্য বজায় থাকুক আপনার। আপনি বেঁচে থাকুন জনগণের মাঝে। শতায়ু হোন জনগণের দোয়ায়।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংকটে আস্থায় আর নির্ভরতায় অনন্য যিনি
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা