ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ লোহাগাড়ার পান চাষিরা

কাণ্ড ও পাতা পচা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত বরজ

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় পানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। এ বছর অতিবৃষ্টি, কাণ্ড পচা, পাতা পচা রোগের সংক্রমণে পানের বরজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন খরচ বেশি পড়লেও পানের মান ভালো এবং আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পান চাষ। অন্যদিকে, হরিণাকুন্ডের ঝালপান সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় দখল করে নিয়েছে বাজার। জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম চুনতি, পানত্রিশা, সাতগড়, নারিশ্চা, আধুনগরের কুলপাগলি, বড়হাতিয়ার চাকফিরানী, পুটিবিলা ও কলাউজানের পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক পান চাষ হয়। চলতি মৌসুমে এসব এলাকায় ৩২ হেক্টর জমিতে পানের বরজ করা হয়েছে। প্রত্যেক বরজে সারি সারি পানের লতা। খুঁটিতে প্যাঁচানো পানের লতায় ধরেছে প্রচুর পান। ইতোমধ্যে পানের আকারও বড় হয়েছে। পানগাছ লাগানোর ছয় মাসের পর থেকে ফলন পাওয়া যায়। প্রতি মাসে তিনবার পান তোলা হয়। উপজেলায় প্রায় চার শতাধিক পান চাষি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ জন পান চাষি আছে আধুনগরের কুলপাগলি এলাকায়। লোহাগাড়ায় মিষ্টিপান, গাছপান ও বাংলাপানের চাষ হয়ে থাকে। গাছপান চাষ অধিক লাভজনক। এই জাতের পান সাইজে একটু বড় হয় কিন্তু এ বছর কাণ্ড পঁচা, পাতা পঁচা (স্থানীয় চাষীদের ভাষায় চাক্কা ও জালি রোগ) রোগের কারণে চাষিরা এই জাতের পান চাষ করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
অন্যদিকে, মিষ্টি পান লাভজনক হলেও পরিশ্রম ও খরচ বেশি। সচরাচর বড় সাইজের প্রতি বিড়া পান (৬০ গণ্ডা) ৩৫০ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে বড় সাইজের প্রতি বিড়া বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ টাকায়। ছোট সাইজের প্রতি বিড়া পানের দাম ৬০ টাকা। পানবরজ থেকে পান তোলে আনা ও বিড়া বানাতে প্রতি বিড়ায় খরচ হয় ৩০ টাকা। এছাড়া পানগাছের প্রতিটি আগা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়।
আধুনগরের কুলপাগলি এলাকার পানচাষি মো. নুরুল কবির জানান, চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। মিষ্টি পান ও বাংলা পানের দুইটি বরজে ২৮ হাজার পান চারা রয়েছে। খরচ হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ৯০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। লোহাগাড়ায় উৎপাদিত পান কেরানীহাট, হাটহাজারী, বহদ্দারহাট ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। সরকারিভাবে পান রপ্তানির উদ্যোগ নিলে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন। অন্যান্য ফসলের মতো পান চাষিদের ভর্তুকি ও সুদবিহীন ঋণ সুবিধার দাবি করেন তিনি।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ছরওয়ার আলম জানান, অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার শতকরা ১০ ভাগ পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টি, দূষিত পানি ব্যবহার, অতিমাত্রায় গোবর, জৈব সার ও ইউরিয়া সার ব্যবহারের ফলে পানে কাণ্ড পঁচা ও পাতা পঁচা রোগ হয়ে থাকে। নিরাপদ ও রোগমুক্ত পান উৎপাদন করতে পরিমিত মাত্রায় জৈব সার ব্যবহার ও পানের বরজে যথাযথ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, লোহাগাড়ার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। নিয়মিত ও সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে পান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়। উপজেলায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। পুকুর, খাল বা বিলের পানিতে পান পরিষ্কার না করে টিউবওয়েলের পানিতে পরিষ্কার করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ২
পরবর্তী নিবন্ধগণকমিশন কাল চট্টগ্রাম আসবে