নেশায় বুঁদ হয়ে যেন কেউ না থাকে

কুমুদিনী কলি | রবিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

বৃষ্টিস্নাত, সুন্দর, সোনাঝরা একটি সকাল! খুব সম্ভবত ভোরেও বৃষ্টি হয়েছিলো, তাই তার রেশ ধরে এখনও পুরো পরিবেশটাই ভেজা ভেজা। সকালের শহরজুড়ে হাঁটলে প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করতেই পারে, কিন্তু তার পাশাপাশি আপনি আরও অনেক কিছুই দেখতে পেতে পারেন, যা ঘরে বসে থাকলে হয়তো দেখার সুযোগ নেই। আমার ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয়, যখন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চিত্র চোখে পড়ে। যখন দেখি আমার সন্তানের বয়সী এক কিশোর এই সকাল বেলা স্কুলে না গিয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকে, একটা ভেজা কম্বল গায়ে জড়িয়ে।
অথবা আমারই মেয়ের বয়সী কিশোরী, সে চরম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে ফুটপাতে। উঠে বসার শক্তিটুকুও নেই শরীরে। এদের এমন একজনকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে। সে তার চোখ জোড়া তুলে আমার দিকে তীব্র আক্রোশে তাকিয়ে ছিলো। আমি রীতিমতো এফোঁড় -ওফোঁড় হয়ে গেলাম। সে তীব্র দৃষ্টিতে চোখ রাখার সাহস সেদিন আমার হয়নি। সে আমায় জবাব দিয়েছিলো তার ভাষায়। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার ব্যর্থতা কতটুকু। ভাবতে পারেন, এসবে আপনার আমার কোনো দায় থাকবে কেনো, বা আমাদের কী করার আছে? এক্ষেত্রে আসলে তেমনভাবে করতে পারার মতো কিছু নেই, শুধু চেয়ে দেখা ছাড়া। খুব বেশি হলে দু’কলম লেখা। পুরো শহর অথবা শহরতলীর আশেপাশে, মফস্বল শহর জুড়ে এরকম ফুটপাতে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা কিন্তু খুব কম নয়। এই বিশাল ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীকে এড়িয়ে যাবার কোনো উপায়ও নেই। এদের অভাবক্লিষ্ট চেহারা, এদের সাহায্যের জন্য বাড়ানো হাত, এদের আকুতি। এদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখে আপনি একবার ভাবতে বাধ্য হবেন।
কিন্তু এতে কি চিরস্থায়ী কোনো সমাধানে আপনি পৌঁছাতে পারলেন? রাষ্ট্র অথবা বৃহৎ কোনো শিল্পগোষ্ঠী এগিয়ে আসার প্রয়োজন কি নেই? এদের একত্রিত করা হোক, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কায়িক শ্রমের জন্য উপযোগী করা হোক এদেরকে। যাতে এরা কোনো পোশাকশিল্প অথবা উৎপাদনমুখী কোনো শিল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহের পথটুকু খুৃঁজে পায়।
অন্তত ভিক্ষাবৃত্তি অথবা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা অভিশপ্ত জীবন থেকে এরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হোক। আর এদেরকে তাদের যাপিত জীবনের অভ্যস্ততা থেকে টেনে বের করে আনতে পারাও সহজসাধ্য কাজ নয়। এরা অনেকেই স্বেচ্ছায় এমন মানবেতর জীবন বেছে নিয়েছে। এটাই সত্যি। তবে ভাবতে ভালোই লাগে, একদিন এমন এক বাংলাদেশ আমরা হয়তো দেখতে পাবো, যেখানে ফুটপাত জুড়ে কোনো ভিখারি হাত বাড়িয়ে থাকবে না। কোনো কিশোরী নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে না। সবাই খেটে খাবে, কাজ করে নিজের রোজগারের পয়সায় খাবে। এমন দৃশ্যের চেয়ে আর কোনো সুন্দর দৃশ্য থাকতে পারে না। এমন একটি সোনার বাংলা দেখতে পারার আশায় অন্তত বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে!

পূর্ববর্তী নিবন্ধনায়কহীন
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে