নেভালে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত বাসযোগ্য পরিবেশ চাই

আলী আকবর বাবুল | সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে আদি গণ বসতি এলাকা, ফিরিঙ্গি বাজার, আলকরণ, সদরঘাট, ইংরেজ আমলের আগে থেকে অত্র এলাকার ইতিহাস, শিল্প-কৃষ্ট সংস্কৃতি এবং অসমপ্রদায়িক মেলবন্ধন দেশজুড়ে আলোচিত। সমৃদ্ধ পূর্ণ এলাকাটি আজ মুমূর্ষু অবস্থা। উল্লেখ্য যে কর্ণফুলী নদী খনন করে। বিশাল একটা এলাকা ভরাট করে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, নান্দনিক এবং বিনোদন স্পট হিসেবে পরিগণিত হয় এলাকাবাসীর, কাছে, উক্ত এলাকাবাসীদের কাছে নির্মল বাতাসে নদীর পাড়ে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকাল বিকাল দুই বেলা হাঁটাহাঁটি সহ শরীর চর্চা করত। বিকাল হলে শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকতো। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠরা নির্মল পরিবেশে আড্ডা তামাশায় মেতে থাকতো। সে এক অপূর্ব দৃশ্য, হাজার হাজার মানুষের সমাগম, দূর থেকে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যেতো, পানির জাহাজ দেখা শিশু-কিশোররা পুলকিত হত, অন্য বয়স্করা এই নির্মল বিনোদন থেকে বাদ যেত না।

সবচেয়ে ভালো লাগতো বন্ধের দিনগুলোতে, কত লোক যে উপস্থিত হতো, তার পরিসংখ্যান জানানো অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য সরকারের মাঝে কিছু বিকৃত রুচির মানুষ চেষ্টা করছে। বিভিন্ন কারণে অকারণে চট্টগ্রামবাসীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে সংশ্লিষ্ট অরুচিকর মানুষগুলো। বলা যাই বন্দরের বিশাল এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পরও, নেভাল-২ খ্যাত নান্দনিক পরিবেশটাকে সরকারের তথাকথিত কর্মকর্তারা ও কিছু ব্যবসায়ীদের প্রলুব্ধ হয়ে কর্তৃপক্ষকে দিয়ে উক্ত মনমুগ্ধকর এলাকাটা ইজারা দিয়ে দিয়েছে বড় বড় কোম্পানিদেরকে, সেইসব কোম্পানিদের মালামাল গুলো খোলা ট্রাকে করে সিমেন্ট ক্লিংকার, ভাঙাচোরা স্ক্রাব লোহা লোড-আনলোড করে। সে মালামাল সদর হয়ে সারা চট্টগ্রাম ঘুরে তাদের কারখানায় যায়। খোলা গাড়ির কারণে সিমেন্ট ক্লিংকার এর ধুলাবালি – ভাঙ্গাচোরা লোহা স্ক্রাবের ভোজ্য অংশ বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়ে সারা চট্টগ্রাম শহরকে লোহা মিশ্রিত বাতাসে পরিণত করতেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, ফিরিঙ্গি বাজার, আলকরণ, সদরঘাট বাসী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এই আদিবাসী নাগরিক গুলো ছাড়াও বন্দর কলোনি ও এখানে আছে। সর্বোপরি লক্ষ লক্ষ লোকজনের বসবাস, উক্ত এলাকায়।

এই এলাকার মানুষজন সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত হচ্ছে, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে, নবজাতক শিশু নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে, এমনও হয়েছে যে দুষিত পদার্থের কারণে গর্ভবতী মহিলাদেরকে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বয়স জ্যেষ্ঠ মহিলা-পুরুষদের শ্বাসকষ্ট লেগেই আছে, আর কিশোর-তরুণদেরকে সামান্যতম কোন রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে, ওষুধ দেওয়ার আগে এঙরে করে আসতে বলে। কারণ ডাক্তারদের ন্যূনতম একটা ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেছে অত্র এলাকার কিশোর-তরুণদের মাঝে এসব দূষিত পদার্থ জমাট বেঁধে, জটিল রোগের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রতিটা ঘরে ঘরে ৩/৪ জন এলার্জি এবং চর্মরোগে আক্রান্ত রোগী বসবাস করছে। এমতাবস্থায় নেভাল ২ খ্যাত নান্দনিক পরিবেশটাকে বিভিন্ন কোম্পানির হাতে দেওয়া ইজারা বাতিল করে, শত শত বছর বসবাস করে আসা মানুষগুলোকে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত বাসযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া অত্র এলাকা বাসীর প্রাণের দাবি। সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অবস্থার প্রেক্ষাপটে মনে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জবির ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধস্বস্তিহীনে স্বস্তি হারাই