নীলিমা ইব্রাহিম : সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ

| শনিবার , ১৮ জুন, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

নীলিমা ইব্রাহিম। সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। নারী উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবকল্যাণমূলক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সমাজ উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন। নীলিমা ইব্রাহিমের জন্ম ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাটের মূলঘর গ্রামে। তার জন্মগত নাম ছিলো নীলিমা রায় চৌধুরী। তাঁর পিতা প্রফুল্লকুমার রায় চৌধুরী এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী।

খুলনা করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, কলকাতা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ.বি.টি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাস করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম ‘বিহারীলাল মিত্র গবেষণা’ বৃত্তি লাভ করেন। একই বছর তিনি ইন্ডিয়ান আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডাক্তার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নীলিমা ইব্রাহিম নাম ধারণ করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন নীলিমা ইব্রাহিম। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমিকায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটক’। তাঁর কর্মজীবনের সূচনা কলকাতার লরেটো হাউসে লেকচারার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে যোগ দেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। প্রায় এক বছর বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন গবেষক, নিবেদিত শিক্ষাবিদ, নিরন্তর শুভব্রতী ও কল্যাণকামী। উদার মানবতাবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং প্রগতিমনষ্কতা ছিল তাঁর জীবনদর্শন। এই দর্শন ফুটে উঠেছে তাঁর জীবনাচরণে, তাঁর সৃষ্টিতে। নীলিমা ইব্রাহিমের উল্লেখযোগ্য রচনাপঞ্জির মধ্যে রয়েছে: গবেষণা গ্রন্থ ‘শরৎ-প্রতিভা’, ‘বাংলা নাটক: উৎস ও ধারা’, ‘সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ’; ছোটগল্প ‘রমনা পার্কে’; উপন্যাস ‘বিশ শতকের মেয়ে’, ‘এক পথ দুই বাঁক’, ‘কেয়াবন’; নাটক ‘দুয়ে দুয়ে চার’, ‘রোদ জ্বলা বিকেল’; কথানাট্য ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’; অনুবাদ ‘এলিনর’, ‘রুজভেল্ট’; আত্মজীবনী ‘বিন্দু-বিসর্গ’ ইত্যাদি। দেশে-বিদেশে বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। নীলিমা ইব্রাহিম সমাজকর্ম ও সাহিত্যে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন। সেগুলি হলো: বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৭), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৯), বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতিপদক (১৯৯০), অনন্য সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৯৭), শেরে-বাংলা পুরস্কার (১৯৯৭), থিয়েটার সম্মাননা পদক (১৯৯৮) ও একুশে পদক (২০০০)। তিনি ২০০২ সালের ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপে-পার-ইউজের নামে ডাটা শেষ হলে ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটা বন্ধ করুন