নিয়ম-পদ্ধতি মেনে রোজার মাহাত্ম্য অর্জন করতে হবে

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রোজা যার ওপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য তাকে রোজার মাসআলামাসায়েল (নিয়মপদ্ধতি) জেনে নেওয়াও ফরজ হিসেবে গণ্য। অর্থাৎ রোজাদারকে রোজার সমস্ত শর্ত করণীয় জানতে হবে। এখানে গাফেলতি বা উদাসীন হয়ে থাকা মানে নিজের অজান্তেই রোজাকে অন্তঃসারশূন্য শুধুই উপবাসের পর্যায়ে নামিয়ে আনা। রোজার মাহাত্ম্য অর্জনে, আত্মার প্রশান্তি মেটাতে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটাতে তাই যথাশুদ্ধভাবে রোজা রাখায় সচেষ্ট হতে হবে সর্বস্তরের রোজাদারকে। সতর্ক থাকতে হবে, সামান্য উদাসীনতায় রোজা যেন নষ্ট না হয়, ছুটে না যায় যেন একটি রোজাওতীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা চাই এদিকে।

রমজান মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ– ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ্‌ শাহ্‌রা ফাল্‌ ইয়াসুম্‌হু’অর্থাৎ যে ব্যক্তি রোজার মাসটি পাবে, তারই কর্তব্য হচ্ছে রোজা রাখা। [সূরা বাক্বারা : ১৮৫]। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনা শরিফে হিজরতের [জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে যাওয়া] আঠার মাসের মাথায় শা’বান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার এই বিধান অবতীর্ণ হয়। এজন্যে রমজান মাসের রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমান জাতির জন্য ফরজে আইন। অর্থাৎ ঐশী বিধিবদ্ধ দায়িত্ব ও বিধান। রমজান মাসে পূর্ণ মাস একজন বালেগ [প্রাপ্ত বয়স্ক], সুস্থ ও বিবেকসম্পন্ন মুসলিম নারীপুরুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ। কোরআনহাদিস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা রোজার বিধান প্রমাণিত। আল্লাহ্‌র নির্দেশিত এ রোজার বিধানকে যে অস্বীকার করবে এবং শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া যে রোজা রাখবে না, সে ফাসিক ও কবিরা গুনাহগার হবে (জঘন্য পাপী হিসেবে আল্লাহ্‌র কাছে ধিকৃত হবে)। মহানবীর (.) হাদিস বা বাণী থেকেও রোজার ফরজ হওয়া প্রমাণিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রমজান মাসের রোজা রাখাকে ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বলা হয়েছে। রোজার অতীব আবশ্যকতা তথা এ ফরজ বিধানকে গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে প্রিয় নবী (.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো শরয়ি ওজর (যৌক্তিক অপারগতা) বা রোগ ব্যতীত রমজানের একটি রোজা ছেড়ে দেবে সে যদি পরবর্তীতে সারাজীবন ধরে রোজা রাখে তবুও তার ক্ষতিপূরণ হবে না। [হাদিসগ্রন্থআহমদ, তিরমিযি, আবূ দাঊদেএ বর্ণনা রয়েছে]

কারা, কোন্‌ অবস্থায় রোজার বাধ্যবাধকতা থেকে সাময়িক নিষকৃতি পাবে কোরআন মজিদে এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সূরা বাক্বারার ১৮৩১৮৪ আয়াতে আল্লাহ্‌র বাণী: ‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যধিগ্রস্ত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্‌য়াএকজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে এটা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।’ এই অতিশয় কষ্ট বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা জানা থাকা দরকার। তা হচ্ছেএমন কষ্ট যা শরিয়তের দৃষ্টিতে ওজর (বাস্তব অপারগতা) বলে গণ্য, যেমন অতি বার্ধক্য, চিরস্থায়ী রোগ ইত্যাদি। অনুরূপ রোজা রাখতে না পারায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান’ মানে একদিনের রোজার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা পেট ভরে খেতে দেওয়া [কান্‌যুল ঈমান ও নূরুল ইরফান, ইমাম আহমদ রেযা খান (রহ.), অনুবাদ : মাওলানা আবদুল মান্নান দ্রষ্টব্য]। তাছাড়া, রোগগ্রস্ত ব্যক্তি বলতে বুঝাবেযার রোগজনিত দুর্বলতা রয়েছে বলে রোজা রাখা অতীব কষ্টকর, তার জন্য ঐ মাসে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। পরে কাযা আদায় করলেই চলবে। রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর (সূর্যোদয়ের ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে থেকে সুবহে সাদিক শুরু) পানাহার ও যৌনাচারে রোজা ভঙ্গ হবে। এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বলা দরকার, আর তা হলো অনেক রোজাদারকে দেখা যায় ফজরের সময় (আজান) শুরু হয়েছে তখনো সেহ্‌রি খাওয়া বন্ধ করেননি। অথবা ঘুম থেকে দেরিতে ওঠে খুব তাড়াতাড়ি সেহ্‌রি খেতে গিয়ে ফজরের সময় হয়ে যায়। তখন তার এ রোজা হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এক পরীক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধএখন কাগজের ব্যালটে ভোটেও আগ্রহ নেই বিএনপির : ফখরুল