নির্ভয়ে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ভয় পাচ্ছেন, আবার কেউ টিকা পাবেন কিনা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এই টিকা নিয়ে অযথা ভয় বা আবেগে তাড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেছেন, ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ হয় না। ইমোশনাল হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সরকার কী করছে? সরকার চেষ্টা করছে। আমরা যদি ভাবি সরকার চুরি করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে এটা ঠিক না। গত শুক্রবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে করোনা টিকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মলনে তিনি একথা বলেন। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. নজরুল বলেন, এখন যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে বলা হয় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন। বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ ট্রায়ালও বলা হয়। হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।
ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন আগে বড় আকারে ব্যবহার করা হত না জানিয়ে তিনি বলেন, আগে হয়নি, কারণ সময় ছিল। এখন যেহেতু সময় নেই, তাড়াতাড়ি আমাদেরকে নিতে হবে। এজন্যই ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিনই আমরা নিচ্ছি, সারা পৃথিবীর লোকই নিচ্ছে। এতে করে অনেক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, ইন্ডিয়াতে এত লোক দিতে রাজি না। এই যে নরওয়েতে ২৩ জন বুড়ো লোক মারা গেছে। এমনটা হলো ফাইজারের ভ্যাকসিনে। তাহলে তো সাংঘাতিক ব্যাপার। আবার ইউকেতে বুড়ো মানুষদের দেওয়া হয়েছে, একজনও মরেনি। তাহলে এসব নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে হবে।
ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেওয়ার সম্পর্ক যে একেবারেই ক্ষীণ, সে কথা তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, অনেক অন্ধকার রাতে কেউ নেই, তখন তো একটু ভয় লাগবে। কিচ্ছু কিন্তু নেই, তারপরও ভয় লাগে। ভয় পাওয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন না নেওয়া হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার। আমরা মনোযোগী হব বায়োলজিক্যাল ব্যাপারে, ফিজিক্যাল ব্যাপারে। সত্যিকারই আমাদের ক্ষতি হয় কি না সেটা দেখব। ইপিআইয়ের যেসব ভ্যাকসিন সেগুলোর বয়স ১০ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত উল্লেখ করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, যে কারণে সেগুলো সেরা। আর আমাদের এই যে করোনা ভ্যাকসিন সেগুলো কেবল যাত্রা হল, এক বছরও হয়নি। অনেক কিছু আমাদেরকে কনসিডার করতে হবে। ইমোশনাল হয়ে কোনো কাজ হয় না।
সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে জনগোষ্ঠীগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে টিকাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগের মহামারীগুলো থেকে পরিত্রাণ এবং পোলিও, হাম, গুটিবসন্ত, ধনুষ্টঙ্কারসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে টিকাদান অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষেত্রেও এটি সত্য। সংগত কারণে তাই প্রথম থেকে বিশ্বব্যাপী ওষুধ কোম্পানি এবং বিজ্ঞানী ও গবেষকরা টিকা উন্নয়নে ব্যাপকভাবে মনোযোগ দিয়েছেন। এরই মধ্যে চূড়ান্ত ট্রায়ালে কয়েকটি কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ হয়েছে এবং সেগুলো যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্সসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যেহেতু প্রতিরোধ তৈরির মাধ্যমে করোনা টিকা নাগরিকদের নতুন স্বাভাবিক জীবন ফেরাতে পারে, সেজন্য বিপুল আশাবাদের সঙ্গে সময় মতো টিকাপ্রাপ্তি দিয়ে প্রতিটি দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন উৎস থেকে আমাদের সমপর্যায়ের দেশগুলো টিকা নেয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশও টিকা পাওয়ার দৌড়ে শামিল। কিন্তু দ্রুত টিকা পাবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এর অবসান জরুরি। টিকা কেনার জন্য সরকার আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বারবার বলে আসছে। সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা কেনার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিভিন্নভাবে জনগণকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় দেখতে চাইব। অগ্রাধিকার নীতির যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত টিকাদানের পাশাপাশি মহামারির টিকা প্রদান চালিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে বিরাট কর্মযজ্ঞের। এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। খুব সংবেদনপূর্ণ ও ঝুঁকির হওয়ায় কোভিড-১৯ এর টিকা প্রয়োগে বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার। সেটি মাথায় রেখে টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিস্তারের সুবাদে একটি বড় জনবল আছে। রয়েছে গতানুগতিক টিকাদান কর্মী। আবার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এনজিওগুলোরও একটা বিশাল কর্মী বাহিনী বিদ্যমান। তাদের কাজে লাগাতে হবে। সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে এই কর্মযজ্ঞে তাদের ব্যবহার করা সহজতর হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে