নির্বাচন ইস্যুতে আ. লীগকে বিশ্বাস করে না বিএনপি

চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশে ফখরুল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৫ জুন, ২০২৩ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন ইস্যুতে আওয়ামী লীগকে আর বিশ্বাস করে না বিএনপি। তাই নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সে যে নামেই ডাকুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেন বা নিরপেক্ষ সরকার বলেন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে হবে।

এসময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এদেরকে কি (ক্ষমতাসীন সরকার) আর নির্বাচনে বিশ্বাস করা যায়? না। তাহলে একটাই কথা সমস্ত মানুষ, রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশকে ও মানুষকে রক্ষার জন্য। গতকাল বুধবার নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যে’র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশ আয়োজন করে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আমেরিকার স্যাংশনে সরকারের হাঁটু কাঁপছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, লজ্জায় আমরা মুখ দেখাতে পারি না। আমেরিকা থেকে স্যাংশন আছে। কেন র‌্যাবকে স্যাংশন দেয়া হয়েছে। র‌্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে। র‌্যাবকে কারা বলেছে, আমাদের ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করতে। সেই সরকার। তারা বলে আমরা ভয় পাই না। অথচ এমন ভয় পেয়েছে হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে। কারণ, তাদের সব কিছু তো বিদেশে। টাকা পাচার করেছে বিদেশে। এইবার যদি তুমি ভোটে আবার কারচুপি করতে যাও, এবার যদি দিনের ভোট রাতে করো। অথবা ওই কুত্তা মার্কা নির্বাচন করো, তাহলে তোমার রেহাই নাই। এইবার রেহাই নাই। আর রেহাই দেওয়া যাবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না, আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। যেসব তরুণ ভাইয়েরা আজকে এসেছে তারা তো শুধু বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে লড়াই করছে না। তারা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, ভোটাধিকার ও চাকরি পাওয়ার জন্য লড়াই করছে। সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারা বলে আমরা আবার ক্ষমতায় যাব। কীভাবে যাবে? ওই পুলিশ ওই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে?

এ সময় জোর করে ক্ষমতায় বসে থেকে সরকার জনগণের উপর স্ট্রিম রোলার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার জোর করে, মানুষের সাথে প্রতারণা ও ভাওতাবাজি করে এবং পরপর দুইটি নির্বাচনে চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছে। পুলিশ ও প্রশাসনসহ সমস্ত যন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় বসে আছে। তারা জনগণের উপর স্ট্রিম রোলার চালাচ্ছে। এ সময় তিনি দেশের মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত এবং ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন মন্তব্য করে বলেন, সেই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে তরুণযুবক ও ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন বলেছিলেন। দেশের তরুণ ছেলেদের চাকরি হচ্ছে? না। এসময় দেশের তরুণরা সবচেয়ে করুণ অবস্থায় আছে, তাদের সামনে অন্ধকার। তারা বুঝতে পারছে না কীভাবে ভবিষ্যতে জীবন চালাবে এবং পরিবারকে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ও কৃষক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। বাজারে আগুন। চাল, তেল, সবজি, চিনি, লবণ, ডিম ও মুরগির দামও বেড়ে গেছে। এসময় ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা বলে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে। কারণ তারা নিজেরা তো ভালো আছে। তারা দেশের মানুষের পকেট কেটে যত টাকা উপার্জন করেছে সব বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। শুধু টাকা নয় তাদের সন্তানদেরও পাঠিয়ে দিয়েছে। আর সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচার, নির্যাতনে নিপীড়িত হয়ে কোনোমতে দিনযাপন করছে। পনের বছর ধরে এই নির্যাতন চলছে। তারা খুনগুম করেছে, আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে প্রতিদিন হয়রানি করছে। আসলাম চৌধুরীসহ অনেক নেতা এখনো জেলে আছে। সারা বাংলাদেশে বিএনপির ৬শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সিলেটের সাবেক এমপি ইলিয়াছ আলীর খোঁজ গত ১৩ বছর ধরে নেই।

ফখরুল বলেন, কোথাও শান্তি নেই। প্রতি পদে পদে আমাদের গলা টিপে ধরা হয়েছে। এই দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? এই দেশ কি যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে তারা চেয়েছিলো? আমরা চেয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব এই নীতিতে। আমরা কথা বলতে পারব, আমরা লিখতে পারব। সাংবাদিকরা এখন লিখতে পারেন না। কারণ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে তলোয়ার চালানো হচ্ছে। সেটা যে কোনো সময় মাথার উপর পড়বে। গুম হয়ে যাবে এবং তারপর কারাগারে যেতে হবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছে এদেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। এদেশে সবচেয়ে ভালো ভোট হয়। মানুষের অধিকার আছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি আমাদের বহু কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোনো বিচার হয় না। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের আটক করে রাখা হয়। আমরা হাইকোর্টে গিয়ে আগাম জামিন নিলে নিম্ন আদালতে কারাগারে পাঠানো হয়। সেটাই শেষ না। কারাগার থেকে হাইকোর্টের জামিন নিয়ে যখন বের হতে যায় তখন আরেকটা নতুন মামলা দেয়া হয়। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের টাকা দিয়ে নিজেদের উন্নয়ন করছে। দেশের সম্পদ লুট করে আওয়ামী লীগ বিদেশে পাচার করেছে। তারা বিদ্যুৎ দিতে পারে না। তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সব টাকা লুট করে নিয়েছেন। সে টাকা কোথায়?

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে দেশে লুটপাট হচ্ছে। চট্টগ্রামে টানেল করা হচ্ছে। টানেল আমাদের প্রয়োজন। তবে আগে আমাদের বাঁচা দরকার। চিকিৎসা, খাবার ও চাকরির দরকার। তিনি বলেন, শুধু ভোট চুরি নয়। তারা আমার সম্পদের সাথে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকও চুরি করে নিয়ে গেছে। এইরকম লুটেরা, চোর সরকার একদিন ক্ষমতায় থাকলে সেটা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। এটা আমার একার কথা না। বিদেশি পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে, যে বাংলাদেশকে বলা হতো উন্নয়নের রোল মডেল সেটা এখন মরীচিকা। এখানে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না। আমাদের সমস্ত অধিকারকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পার্লামেন্টকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বরিশালে মেয়র নির্বাচনের ভোটে যখন তারা দেখলো হেরে যাবে তখন ইভিএমে কারসাজি করে ভোট চুরি করলো। তিনি বলেন, ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয় সে দেশে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। এটা কোনো দেশ হলো। ইস্পাত ও কঠিন ঐক্য নিয়ে আমাদের এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহাজাহান। কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে বিশেষ বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ভিপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

বরকত উল্লাহ বুল বলেন, গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তরুণরা রাজপথে নেমে এসেছে, তারা আর ঘরে ফিরে যাবেন না। সরকারের পতনের চূড়ান্ত পর্যায় চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে।

মো. শাহজাহান বলেন, আজকে তরুণদের উচ্ছ্বাস দেখে আশা জেগেছে, অবশ্যই সরকারের পতন হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তরুণদের রুখে দাঁড়াতে হবে এবং জেগে উঠতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারকে রুখে দিতে হবে।

রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, আজ তরুণ প্রজন্ম স্লোগান দিচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। তরুণ প্রজন্মের অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাব। সুনামির মত সবখানে ছড়িয়ে দেব আন্দোলন।

এস এম জিলানী বলেন, ভোটাধিকার বঞ্চিত ৩ কোটি ৭০ লাখ তরুণ সমাজের প্রতিনিধি আজকের সমাবেশে এসেছেন।

কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, তারুণ্যের শক্তি দেখে ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাবে এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।

সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু বলেন, বিদ্যুৎ বিল দিই এরপরও কয়লা কেনার টাকা নাই কেন? এ টাকা পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, দেশটা সবার। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভাগ করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ না হলে চাকরি মিলে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কুমিল্লায় যারা গোলাগুলি করেছে তারা কি গ্রেপ্তার হয়েছে? এক দেশে দুই আইন মানি না।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নূর ইসলাম নয়ন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াছিন আলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের খেলা শেষ : আমীর খসরু
পরবর্তী নিবন্ধমার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়ার প্রশংসায় চীন