নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ২

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১২ নভেম্বর, ২০২১ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও কক্সবাজারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় দুইজন নিহত হয়েছেন। ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের গোপালঘাটা এম আর সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর ২ টার দিকে ফুটবল প্রতীকের মুরাদ ও মোরগ প্রতীকের জামাল পাশার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে গোপাল ঘাটা এলাকার মৃত ফজলুল হকের ছেলে শফি উদ্দিন (৫০) নিহত হন। তিনি পেশায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান মালিক। প্রার্থী মুরাদ নিহত শফিকে তার সমর্থক বলে দাবি করেছেন বলে পুলিশ জানায়।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মেম্বার প্রার্থী শেখ কামাল ও আবু বকর ছিদ্দিকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আক্তারুজ্জামান পুতু (৩৫) নামের একজন প্রাণ হারান। তিনি তেতৈয়া গুইল্ল্যাবাপের পাড়ার মমতাজ আহমদের ছেলে এবং মেম্বারপ্রার্থী শেখ কামালের চাচাত ভাই।
আমাদের ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়ির ১৪ ইউনিয়নেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নানা স্থানে সহিংসতা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, জাল ভোটের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীরা তাদের ভোটারদের ভোট দিতে বাধা প্রদান ও কেন্দ্র থেকে এজেন্ট তুলে দেওয়া, জাল ভোট প্রদান ও ভোট গণনায় কারচুপিসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন। লেলাং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত শফি উদ্দীন একজন ব্যবসায়ী। দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনি ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আরো ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, লেলাং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দুই মেম্বার পদপ্রার্থীর সমর্থকের সংঘর্ষ ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে ধর্মপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে নারী পুরুষ ভোটারের দীর্ঘ লাইন। সকাল সাড়ে ৮টায় ধর্মপুর কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে দলে দলে ভোটার আসতে দেখা গেছে। রোসাংগীরি আজিমনগর স্কুল মাঠেও ভোটারের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
সকাল ১০টায় নারায়ণহাট হাঁপানিয়া ও সুন্দরপুর কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুন রশিদ দলবল নিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আবু জাফর মাহমুদকে ধাওয়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সেখান থেকে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাইন্দং বেড়াজালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ সেখানে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাগান বাজার হলুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জসিম উদ্দিন নামে তালা প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী ও তার সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার জামা কাপড় ছেড়া দেখা গেছে। সকাল থেকে হারুয়ালছড়ি মধ্য হারুয়ালছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একাদিক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে সেখানে পুলিশ বিজিবি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দাঁতমারা বড় বেতুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা আনারস প্রতীকের কর্মীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পশ্চিম কাঞ্চন নগরের দুইটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সীল মারা ব্যালেট পাওয়ার অভিযোগ করেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী রশিদ উদ্দীন চৌধুরী কাতেবের এজেন্টরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার। তবে অনেক ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের চিত্রও দেখা গেছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, কিছু বিশ্চিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিক ভোট গ্রহণ সুষ্ট হয়েছে।
এদিকে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন অহিদুল আলম জুয়েল। লেলাং ও বক্তপুর ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর আবেদনে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে স্থগিতাদেশ রয়েছে হাইকোর্টের। তাই সেখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, তিন উপজেলার ২১ ইউনিয়নের নির্বাচনে মাত্র দুটি কেন্দ্রে সহিংসতার কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়া ছাড়া বাকী ২০১ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরে ভোট দেন।
তবে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হলে এবং বিকাল ৩টার দিকে উখিয়ার নলবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী শাহ আলম ও আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি-মারিমারির ঘটনায় কেন্দ্র দুটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
খুরুশকুলের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আক্তারুজ্জামান পুতু (৩৫) নামে একজন নিহত হন। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুল হুদা
জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মেম্বার প্রার্থী শেখ কামাল ও আবু বকর ছিদ্দিকের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধলে উভয়পক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ও গুলি ছোঁড়ে। এতে একজন নিহত ও পুলিশসহ ১০ জন আহত হন। ঘটনার পর এ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।
জেলার রামুর ১১টি, উখিয়ার ৫টি ও কক্সবাজার সদরের ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সহিংসতার কারণে ২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং দুটি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের ফলাফল ঝুলে গেল। এ দুটি কেন্দ্রে পরবর্তীতে পুনরায় ভোটগ্রহণ করা হবে বলে জানান জেলা নির্বাচন অফিসার এসএম শাহাদাত হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফাটলের বিষয়ে নিশ্চিত হল সওজের উচ্চ পর্যায়ের টিম
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীর ১৩ ইউনিয়নে ১৫ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার