ফাটলের বিষয়ে নিশ্চিত হল সওজের উচ্চ পর্যায়ের টিম

আজ ঢাকা থেকে আসবে আরও একটি দল বন্দর টোল রোড ফ্লাইওভারের পিলার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১২ নভেম্বর, ২০২১ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বন্দর টোল রোডের ফ্লাইওভারটির পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ঢাকা থেকে আসা উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম ফাটলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে আরো বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য আজও একটি টিম আসছে ঢাকা থেকে। ফ্লাইওভারটিতে ফাটল দেখা দিলেও তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে যে, যে ফাটল তৈরি হয়েছে তা সংস্কারযোগ্য এবং এটি সংস্কার করার সক্ষমতা সড়ক ও জনপথ বিভাগের রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দর সড়ককে কোন ধরনের ডিস্টার্ব না করে চট্টগ্রাম বন্দরে সাথে টোল রোডের সংযোগ ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে বছর দশেক আগে নির্মাণ করা হয় বন্দর টোল রোড ফ্লাইওভার। চট্টগ্রামের প্রথম ওই ফ্লাইওভার ব্যবহার করে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল এবং চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালের লাখ লাখ টিইইউএস কন্টেনার নির্ঝঞ্জাটে পরিবাহিত হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ফ্লাইওভারটির সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার পিলারে একটি ফাটল দেখা দেয়। সম্প্রতি এই ফাটলটি স্থানীয়দের চোখে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়। ফ্লাইওভারটি কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা পিলার ভেঙে গেলে বন্দরের কন্টেনার পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কের যান চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্লাইওভারটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিষয়টি জানার পর দৈনিক আজাদী গত মঙ্গলবার প্রথমপৃষ্ঠায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমার উদ্বৃতি দেয়া হয়। যাতে তিনি পরদিনই ফ্লাইওভারের পিলারের ফাটল দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে দৈনিক আজাদী প্রতিবেদককে জানান। কিন্তু পরদিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে পিন্টু কুমার চাকমা ক্ষুব্ধ হন। তিনি ফ্লাইওভারের ফাটল দেখতে যান নি এবং দেখতে হবে না বলেও দৈনিক আজাদী প্রতিবেদকের নিকট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বন্দর টোল রোডের ফ্লাইওভারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসিনতার ব্যাপারে দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুরের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ফ্লাইওভারের পিলারের ফাটলের বিষয়টি তাঁকে জানানো হলে তিনি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে দৈনিক আজাদীকে জানান। রাতেই তিনি ফ্লাইওভারের পিলারের ছবি তুলে তাঁর কাছে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। পিলারের ফাটলের ছবি পাওয়ার পর তিনি রাতেই বিষয়টি সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে জানান। মন্ত্রী এবং সচিব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফ্লাইওভারের পিলারের ফাটলটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। এই নির্দেশনা পাওয়ার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর সংস্থার ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাও এবং সেতু ডিজাইন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনকে সকালের ফ্লাইটে চট্টগ্রামে এসে ফ্লাইওভারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন।
প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনা পেয়ে উপরোক্ত দুই শীর্ষ প্রকৌশলী গতকাল সকালের ফ্লাইটে চট্টগ্রামে পৌঁছান এবং চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল ওয়াহিদ, চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমাকে নিয়ে ফ্লাইওভারের ফাটল পরিদর্শন করেন। বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা ফাটলটি খুব কাছ থেকে দেখে নিশ্চিত হন যে, পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি সংস্কার করা যাবে। তারা বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলীকে জানালে দুই প্রকৌশলীকে চট্টগ্রামে অবস্থান করে পিলারের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করেন। ঢাকা থেকে আসা প্রকৌশলী টিমটি চট্টগ্রামেই অবস্থান করছে। এদিকে ফাটলটির গভীরতাসহ বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। আজ ঢাকা থেকে অপর একটি টিম ফাটল পরীক্ষা করতে আসছে।
গতরাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর দৈনিক আজাদীকে জানান, ফাটল দেখা দিয়েছে এটি ঠিক। তবে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই ফাটল সংস্কার করা যাবে এবং এটি সংস্কার করার সক্ষমতা আমাদেরই রয়েছে। তিনি এমন জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য দৈনিক আজাদীকে ধন্যবাদ জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুবই সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর ভোট হয়েছে : ইসি
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ২