নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রায় বেড়েছে অস্থিরতা

| বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে পড়ে নাস্তানাবুদ এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জীবন। একে তো করোনা মহামারির বড় চাপ, তার উপর ঘাড়ে এসে চেপেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট সংকট। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রায় তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। চারদিকে উদ্বেগ। এক রকম হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। দিন দিন সব পণ্য ঊর্ধ্বগতিতে এগুচ্ছে। খবরে প্রকাশ, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবন নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, মাংস, শাকসব্জি, ডাল, তরিতরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন।
পত্রিকাগুলোতে বলা হয়েছে, ‘বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুতের দামও। সেখান থেকে পরিত্রাণের আগেই নতুন করে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ, যা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এর প্রভাবে আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। আর গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রাও আরও চরমে উঠেছে। পাশাপাশি নতুন করে সকাল ও বিকালের নাশতা তৈরির উপকরণের দাম আরেক দফা বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। ফলে আয় না বাড়লেও সব শ্রেণির মানুষের ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পরিবার।’ এতে আরো বলা হয়েছে, গত বছর থেকে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে অস্থির করে তুলেছে। পাশাপাশি বেড়েছে চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয়। বেড়েছে বাড়ি ভাড়াও। ফলে জীবনযাপনে সব খাতেই নিজ থেকেই একরকম ‘রেশনিং’ করতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় সব শ্রেণির মানুষ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাহিদা থাকলেও ব্যয় কমাতে পণ্য ও সেবা কেনার ক্ষেত্রে বাজেট কাটছাঁট করছেন অনেকেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন খরচ চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে উঠছে। একাধিক পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গণপরিবহণের ভাড়া বেড়েছে। এতে মানুষের সার্বিক ব্যয় আরেক দফা বাড়ছে। ফলে সব শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে। তাই এই সংকট মোকাবিলায় সরকারি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ও সন্তোষজনক বলে মনে করা হলেও চাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমপ্রতি একাধিক জরিপে উঠে এসেছে। বিশেষ করে শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় না বাড়লেও নানাভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শহুরে দারিদ্র্য বেড়েছে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষকে তাদের আয়ের বেশিরভাগ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে। এর ফলে সুষমখাদ্য তথা পুষ্টির চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ বা সংস্থান করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও চলছে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা, অস্বাভাবিকহারে ও অযৌক্তিক প্রক্রিয়ায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার একদিকে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল ও দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বাড়িয়ে নিজেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে। যা নিতান্তই দুঃখজনক। অর্থনীতিবিদরা বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ে পুরো অর্থনীতিতে, বাড়তি চাপ পড়ে সব শ্রেণির মানুষের উপর। মানুষের পণ্য সামগ্রী কেনার ক্ষমতা কমে যায়। আগে যে পণ্যটির দাম ছিল ১০০ টাকা, সেই পণ্যটি এখন কিনতে হবে ১১০ টাকায়। একই পরিমাণ টাকা দিয়ে আগের চেয়ে কম জিনিস কিনতে হবে। বিপরীতে সবার আয় তো আর সমানভাবে বাড়ে না। কিন্তু, মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ে সমানভাবে। এতে করে, বেশি বিপাকে পড়তে হয় ধরাবাঁধা আয়ের মানুষকে। সংসার চালাতে সঞ্চয় করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সাধারণ মানুষ।
বর্তমান সরকার উন্নয়নে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছেন। তারপরও দেশের মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে ১২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আরও বেশি মানুষ হতদরিদ্রের তালিকায় যোগ দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলে এ বিষয়ে গভীর ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে